প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ জেলাবাসী
বর্তমান | ২৮ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, পতিরাম: ছাত্রজীবন থেকেই শুরু হয়েছিল রাজনীতি। এরপর একের পর এক সংগ্রামে জয়ী হয়ে বিধায়ক থেকে মন্ত্রী হন। আট বারের বিধায়ক ও দীর্ঘদিনের মন্ত্রী ছিলেন বালুরঘাটের বিশ্বনাথ চৌধুরী। তিনিই হয়ে উঠেছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রাজনৈতিক অভিভাবক। জেলার বর্ষীয়ান সেই রাজনৈতিক অভিভাবক আর নেই। শনিবার ভোররাতে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। চলতি মাসেই তাঁর ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তাঁর প্রয়াণে গভীরভাবে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল।
প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর বাড়ি বালুরঘাট শহরের টাউন ক্লাব এলাকায়। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেন। ছাত্রাবস্থায় আরএসপি’র ছাত্র সংগঠন পিএসইউ করতেন। পরপর তিন বার বালুরঘাট কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম বার তিনি বালুরঘাট থেকে বিধায়ক হন। পরবর্তীতে পরপর ভোটে জিতে ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের কারামন্ত্রীর পদ সামলান।
টানা সাত বার বিধায়ক হওয়ার পর ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান। এরপরও বিশ্বনাথবাবুর ক্রেজ কমেনি। তার প্রমাণ ২০১৬ সালের ভোটে জিতে ফের তিনি বিধায়ক হন। তবে ২০২১ সালের ভোটে তিনি লড়েননি। স্বেচ্ছায় আর ভোটে না লড়ার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন আরএসপি’র রাজ্য সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি জেলা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল ঠিক করতেও তাঁর ভূমিকা ছিল।
তবে গত এপ্রিলে বিশ্বনাথবাবুর স্ত্রীর অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই তিনি শোকস্তব্ধ ছিলেন। সেইসঙ্গে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ১০ জুলাই তাঁকে বালুরঘাট থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তারপর ১৬ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই এদিন ভোরে এই বর্ষীয়ান রাজনীতিকের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা আরএসপি জানিয়েছে, রবিবার বালুরঘাটে জেলা কার্যালয়ে প্রয়াত নেতার মরদেহ আনা হবে। আরএসপির জেলা কার্যকরী কমিটির সদস্য প্রলয় ঘোষ বলেন, বিশ্বনাথ চৌধুরী বালুরঘাট তথা জেলার রাজনৈতিক অভিভাবক। সকলের প্রিয় একজন নেতা ছিলেন। আমরা রাজনৈতিকভাবে অভিভাবকহীন হলাম। রবিবার জেলা পার্টি অফিসে মরদেহ আনা হবে। আমরা শোক মিছিল করব।
এদিন সকালে বিশ্বনাথবাবুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলার মানুষ শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে। বরাবর সাদা পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরেই জেলাজুড়ে দাপিয়ে বেড়াতেন বিশ্বনাথবাবু। রিক্সা চালক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী এবং বিরোধী নেতৃত্ব সকলের সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। তিনি দীর্ঘদিন কারা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই বালুরঘাটে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার, নতুন স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি থেকে শুরু করে নানা কাজ হয়েছে। প্রয়াত মন্ত্রী।