• মোদির বৈঠকে বঞ্চনা নিয়ে সরব হতেই বন্ধ মাইক, প্রতিবাদে ওয়াকআউট ক্ষুব্ধ মমতার
    বর্তমান | ২৮ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: সংসদ থেকে নীতি আয়োগ—মোদি জমানায় গণতন্ত্রের অপর নাম বিরোধীদের মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া! গত মাসেই লোকসভায় এর শিকার হয়েছেন স্বয়ং রাহুল গান্ধী। নিট কেলেঙ্কারি নিয়ে তাঁর বক্তৃতার সময় মাইক্রোফোন বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছিল স্পিকার ওম বিড়লার বিরুদ্ধে। এবার সেই একই কাণ্ডের শিকার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ইন্ডিয়া’ শরিক দলগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র তিনিই শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। আর সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে বাংলার বঞ্চনা নিয়ে সরব হওয়ামাত্র বক্তৃতার মাঝপথে তাঁর মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে নীতি আয়োগের বৈঠক থেকেই ওয়াকআউট করেন ক্ষুব্ধ মমতা। তবে তার আগে প্রধানমন্ত্রীর মুখের উপর বলে যান, ‘ইউ আর পলিটিক্যালি বায়াসড (আপনি রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট)। বাংলা সহ বিরোধী রাজ্যগুলিকে বাজেটে কিছুই দেওয়া হয়নি। স্রেফ দু’টি রাজ্যকে উপহার দিয়েছেন। এখন বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র আমি বৈঠকে যোগ দিলেও বলতে দেওয়া হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে অপমান করা হচ্ছে। তাই এই বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করছি।’


    এদিন দুপুরে বৈঠক শেষের আগেই বাইরে বেরিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সাফ অভিযোগ, ‘আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। সবে রাজ্যের বঞ্চনার কথা বলতে শুরু করেছি। কিন্তু মাঝপথেই আমার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ চন্দ্রবাবু নাইডুকে ২০ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছে। আমার আগে পাঁচজন মুখ্যমন্ত্রীকে ১৫-২০ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেওয়া হলেও আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক বন্ধ করে আমাকে অপমান করা হয়েছে। তাই প্রতিবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এসেছি। এ ধরনের বৈঠকে আর কোনওদিন যোগ দেব না।’ বিকেলে কলকাতায় ফিরে বিমানবন্দরেই আরও এক দফা ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। সাফ জানান, ‘আমি সব বিরোধীদের হয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আমার কথার মাঝে যদি বারবার বেল বাজিয়ে বন্ধ করতে বলো, তবে সেটা অপমান নয়? এখানে গণতন্ত্র কোথায়? বৈঠক ছেড়ে চলে এসে ঠিক করেছি।’


    ‘ইন্ডিয়া’ জোটের আট মুখ্যমন্ত্রী বয়কট করেছেন নীতি আয়োগের বৈঠক। হাজির ছিলেন একমাত্র মমতা। নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে এদিনের বৈঠকে আলোচ্য বিষয় ছিল ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭।’ সে সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে সামান্য কিছু কথার পরই তাঁর বক্তৃতায় উঠে আসে বাংলার বঞ্চনার ইস্যু। ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা বকেয়া। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে ইন্দো-ভুটান নদী কমিশনের প্রস্তাব দেন মমতা। তখনই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে ‘ইন্ডিয়া’র অন্য শরিকরা। প্রতিবাদ জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। প্রশ্ন তুলেছেন, এটাই যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো? একজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন এই আচরণ?


    যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে দিনভর মুখ্যমন্ত্রীর মাইক বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সাফাই, ‘মোটেই মাইক বন্ধ করা হয়নি। প্রত্যেকের জন্যই একই সময় বরাদ্দ ছিল। সাত মিনিট। তবে কোনও মুখ্যমন্ত্রী বাড়তি বলতে চাইলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মমতাজি চাননি। আসলে তিনি বেরিয়ে যাওয়ার ছুতো খুঁজছিলেন।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)