• ই-সাক্ষ্য অ্যাপে সমস্ত নথি আপলোড বাধ্যতামূলক, পুলিসি তদন্তে সরাসরি হস্তক্ষেপ কেন্দ্রের!
    বর্তমান | ২৮ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। তাদেরই এক্তিয়ার। নজিরবিহীনভাবে এবার সেই পুলিসি ব্যবস্থায় সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠল মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্য প্রশাসনের যাবতীয় তদন্ত প্রক্রিয়ায় নজরদারি চালাতে চাইছে কেন্দ্র। আর সেকাজে তাদের হাতিয়ার এখন ‘ই-সাক্ষ্য’ অ্যাপ। সেটির মাধ্যমে তদন্তের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়মিত আপলোড বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আসলে কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের লক্ষ্য, তদন্তের বিষয়বস্তু জেনে নিয়ে ঘুরপথে বিভিন্ন নির্দেশ পাঠানো। সেই সঙ্গে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলিতে কোনও তথ্যপ্রমাণ হাতে এলে তা আগেভাগে জেনে নেওয়া। দিল্লির এই ছক বুঝে রাজ্য সরকারও সমান্তরাল একটি অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে বলে খবর।


    ভারতীয় দণ্ডবিধির নাম পাল্টে নিয়ে মোদি সরকার এনেছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা। আনা হয়েছে ভারতীয়  সাক্ষ্য অধিনিয়ম ও ভারতীয় সাক্ষ্য আইন। নতুন ব্যবস্থায় মোদি সরকার ‘ই-প্রমাণ’ চালু করেছে। সেই কারণে মোবাইল ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন চালুর পথে হেঁটেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আর ওই প্রক্রিয়ার অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে ‘ই-সাক্ষ্য’ অ্যাপ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গাইড লাইনে বলা হয়েছে, নতুন আইন অনুযায়ী ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ তুলতে হবে। একইসঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা সমস্ত সামগ্রীর ভিডিওগ্রাফিও বাধ্যতামূলক। তবে সেই ভিস্যুয়াল চার মিনিটের বেশি দীর্ঘ হবে না। সমস্ত ছবি তোলার পর সেলফি তুলবেন তদন্তকারী অফিসার। সমস্ত কিছু আপলোড করতে হবে ওই অ্যাপে। এটা বাধ্যতামূলক। 


    রাজ্য পুলিস সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এতদিন ঘটে যাওয়া অপরাধের পরিসংখ্যান রাজ্যগুলি জানাতো এনসিআরবিকে। সেই তথ্য প্রতিবছর প্রকাশ করে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেখানে বাজেয়াপ্ত হওয়া সামগ্রী বা ঘটনাস্থলের ছবি ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলা ছিল না। নতুন আইনের আড়ালে কেন্দ্র যেভাবে রাজ্যের তদন্ত প্রক্রিয়ায় নাক গলাতে চাইছে, তা নজিরবিহীন। পুলিস কর্তাদের ব্যাখ্যা, রাজ্যে কোনও ঘটনা ঘটলে সেখানকার পুলিসই তদন্ত করে। এটি অত্যন্ত গোপনীয় প্রক্রিয়া। তদন্তকারী অফিসার কীভাবে তদন্ত চালাচ্ছেন এবং তাতে কী কী পাওয়া গেল, সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তা ভিন্ন কাউকে জানাতে তিনি বাধ্য নন। এমনকী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও না। কিন্তু ‘ই-সাক্ষ্য’ অ্যাপে আপলোড করার অর্থ, তা দিল্লিকে জানিয়ে দেওয়া। বাজেয়াপ্ত করা সামগ্রীর ছবি-ভিডিও ওই অ্যাপ থেকে ফাঁস কিংবা হ্যাক হবে না, তার নিশ্চয়তাই বা কোথায়? তাছাড়া এই অ্যাপ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বাইরের সংস্থা। তাই অনভিপ্রেত কিছু ঘটে গেলে সেটা জানাই বা যাবে কী করে? সেই কারণেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তৈরি করা অ্যাপে ভরসা রাখতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাই এই ধরনের আলাদা একটি অ্যাপ তৈরির কাজ চলছে, যা থানার পুলিসকর্মী ও ঊর্ধ্বতন অফিসার বাদে কেউ দেখতে পারবেন না।        
  • Link to this news (বর্তমান)