• মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেও খরচে রাশ কীভাবে? সংসারী হওয়ার হাতেখড়ি এবার স্কুলেই
    বর্তমান | ২৮ জুলাই ২০২৪
  • অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে আম জনতার। বাংলা সহ গোটা দেশেই এক অবস্থা। কাঁচা আনাজ, ফল থেকে শুরু করে মাছ, মাংসের দামে ছেঁকা খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সংসার চালাতে জেরবার মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তরা। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে খরচে রাশ টেনে সুষ্ঠুভাবে সংসার চালানো যায়, তারই পাঠ দেওয়া হবে স্কুলে। কীভাবে সীমিত বাজেট নিয়েও বুদ্ধি করে কেনাকাটা করা সম্ভব, কীভাবে পুষ্টিগুণের সঙ্গে আপস না করেও তুলনামূলক কম দামে শকসব্জি কেনা যায়—পড়ুয়াদের স্কুলস্তরেই দেওয়া হবে এসব শিক্ষা। 


    আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রেখে সংসার চালানো অনেকের ক্ষেত্রেই রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। সে সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা আগাম দিতে পারলে ভবিষ্যতের সংসারীরা কঠোর বাস্তবের জমিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে বাড়তি রসদ পাবে বলে মনে করছে শিক্ষক মহল। উচ্চ মাধ্যমিকে এ বছর থেকে চালু হয়েছে ‘সায়েন্স অব ওয়েল বিইং’ বিষয়টি। বাংলায় বললে, এর অর্থ দাঁড়ায় ‘ভালো থাকার বিজ্ঞান।’ ভালো থাকার বিষয়টি আপেক্ষিক হলেও কিছু ‘কমন ফ্যাক্টর’ অবশ্যই কাজ করে। শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষের ভালো থাকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাও বেশি। সংসার খরচ সামাল দিতে গিয়ে যে মানসিক চাপ তৈরি হয়, তা প্রভাব ফেলে ভালো থাকার উপরেও। এদেশে বাণিজ্য বিষয়ক পড়াশোনার ইতিহাস বেশ পুরনো। কিন্তু ‘পার্সোনাল ফিনান্স’ বিষয়টি লেখাপড়ার মূলস্রোতে অবহেলিতই থেকে গিয়েছে বরাবর। কিন্তু তাতেই লুকিয়ে রয়েছে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াইয়ের চাবিকাঠি এবং ‘সফল’ সংসারী হয়ে ওঠার রহস্য। নয়া সংযোজিত বিষয়টিতে থাকছে তার সুলুক সন্ধান। কলা, বিজ্ঞান বা বাণিজ্য—যে কোনও বিভাগের পড়ুয়াই চাইলে এই বিষয় নিতে পারবেন। 


    অনেকে যা রোজগার করেন, তার প্রায় পুরোটাই খরচ করে ফেলেন। সঞ্চয় বলতে কিছু থাকে না। কীভাবে সঞ্চয় করা যাবে, কীভাবে ভালো রিটার্ন মিলবে, অবসর জীবনের জন্য আর্থিক পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি—সব কিছুই থাকছে পাঠ্যক্রমে। দ্বাদশ শ্রেণিতে যে প্রথম সেমেস্টারের (উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সেমেস্টার) পরীক্ষা ছাত্রছাত্রীরা দেবেন, সেই সিলেবাসে ইউনিট ২-তে এই বিষয়ের মেধ্যে রয়েছে ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট, ইমার্জেন্সি সেভিংস, রিস্ক অ্যান্ড ডেট ম্যানেজমেন্ট, কনসেপ্ট অব বাজেটিং প্রভৃতি অধ্যায়। 


    নতুন বিষয় হওয়ায় খুব বেশি স্কুল এখনও বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘৫০টির কাছাকাছি স্কুল এই বিষয় নিয়েছে। স্টাডি মেটেরিয়াল তৈরি হয়ে রয়েছে। একটি বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে বই প্রকাশের জন্য।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক বিষয় রয়েছে, ভবিষ্যৎ জীবনে যেগুলির ভূমিকা খুব সীমিত। কিন্তু এই বিষয়টির গুরুত্ব থেকেই যাবে। এতে শুধু আর্থিক বিষয় নয়, শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যত্মিক উন্নতির নানা দিকও রয়েছে। পরবর্তীকালে ছাত্রদের উচ্চশিক্ষা বা পেশাজীবনে এই শিক্ষা প্রভুত সাহায্য করবে বলে আশাবাদী তাঁরা। 
  • Link to this news (বর্তমান)