এই সময়, শান্তিনিকেতন: রবীন্দ্রমূর্তি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোলপুর পুরসভা। আজ, রবিবার ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ শান্তিনিকেতনের বাফার জোনে প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতার রবীন্দ্রমূর্তি উন্মোচনের কথা ছিল রাজ্যের ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের। অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে বিলিও করেছিল পুরসভা। এ নিয়ে আপত্তি তোলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।তাঁদের যুক্তি, শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম আশ্রম। মূর্তি পুজো হয় না। স্বয়ং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশ্যে কোনও মূর্তি নেই। সেখানে কী ভাবে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ -এর তকমা পাওয়া বিশ্বভারতীর বাফার জোনে রবীন্দ্রমূর্তি বসানো হচ্ছে? বিশ্বভারতীর আপত্তিতে বিতর্ক শুরু হওয়ায় তড়িঘড়ি অনুষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।
পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষ বলেন, ‘ওখানে আগে একটি ছোট রবীন্দ্রমূর্তি ছিল৷ সেটা বড় করে করা হয়েছিল। তবে বিশেষ কারণে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য এই মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠান বাতিল করলাম৷ পরবর্তীতে দেখা যাবে।’ বিশ্বভারতীর জমি দখল করে মার্কেট, ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা, বসন্তোৎসব বাতিল করা নিয়ে এর আগে তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়েছিল পুরসভা তথা রাজ্য সরকারের।
পরে নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় সম্পর্ক অনেকটা ভালো হয়। ফের সংঘর্ষ এড়াতেই কি তড়িঘড়ি রবীন্দ্রমূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠান বাতিল করল পুরসভা? মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে এখানে নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনা শুরু করেছিলেন৷ পরবর্তীতে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন।
কেন্দ্রীয় সরকার অধিগ্রহণের পরে তা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত হয়। দেশের আর পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর সংস্কৃতি, পঠন-পাঠন পদ্ধতি। সেই কারণে ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনেস্কো বিশ্বভারতীকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ তকমা দেয়।
এ মাসের গোড়ায় ইউনেস্কোর সদস্যরা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সীমানা চিহ্নিত করেন৷ যেখানে বিশ্বভারতীর আশ্রমকে কোর এরিয়া, এবং সংলগ্ন অঞ্চলকে বাফার জোন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ইউনেস্কোর নিয়ম অনুযায়ী ওই কোর এরিয়া বা বাফার জোনে নতুন করে কোনও রকম নির্মাণ করা যাবে না।
কিন্তু বিশ্বভারতী লাগোয়া কবিগুরু মার্কেটে প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতার একটি রবীন্দ্রমূর্তি বসিয়েছে বোলপুর পুরসভা৷ বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া এই মার্কেটে ৫০টি দোকান রয়েছে। ওই অস্থায়ী দোকানঘর বেআইনি ভাবে নির্মাণ করার অভিযোগ করে গত ৭ জুলাই বীরভূমের জেলাশাসককে চিঠি দেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ওই অস্থায়ী দোকানগুলির সামনে রবীন্দ্রনাথের ছোট মূর্তি বসানো হয়েছিল।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অনুমান, উচ্ছেদ আটকাতে ওই মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো বলেন, ‘শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী মূর্তিপুজো, ব্যক্তিপুজোর বিরোধী। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের বাফার জোনের ১০০ মিটারের মধ্যে কী ভাবে মূর্তি বসতে পারে?’
কবিগুরু মার্কেট কমিটির সভাপতি আমিনুল হুদা বলেন, ‘আমরা রাজ্য সরকারের জায়গায় রবীন্দ্রনাথকে সম্মান জানাতে মূর্তি বসিয়েছি। পুজো করতে তো নয়! বিশ্বভারতী আগে বাফার জোনের ম্যাপ দেখাক।’