সম্প্রতি এমন নালিশ এসেছে দক্ষিণ শহরতলির কালিকাপুর থেকে। সেখানকার বাসিন্দা সুব্রত রায়ের অভিযোগ, ‘‘বাড়ির সামনের ডোবায় কিলবিল করছে মশার লার্ভা। বর্ষার মরশুম। কিছু একটা করুন।’’ উল্লেখ্য, তার পরেই মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, তেলাপিয়া ছেড়ে দেখা যায়। মেয়রের ব্যক্তিগত উপলব্ধি, যেখানে পুকুর নোংরা সেখানে আমি দেখেছি লায়লনটিকা বা তেলাপিয়া ছেড়ে দিলে তা হু হু করে বাড়ে। কচুরিপানা হয়ে থাকলে গাপ্পি বাড়তে পারে না। ওদের বাড়তে সূর্যের আলো প্রয়োজন। যেখানে পুকুরে কচুরিপানা, কিংবা সূর্যের আলো কম সেখানে লায়লনটিকা কিংবা তেলাপিয়া ছাড়া হবে এবার। তেলাপিয়া শুধু মশার ডিম নয়। মশাও খেয়ে নেয় চটপট।
এই নিয়েই চিন্তায় পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ ডা. দেবাশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, শহরে অসংখ্য দরিদ্র মানুষের বাস। পারলে গাপ্পি মাছ ভেজে খেয়ে নেয়! নর্দমায়-জলাশয়ে তেলাপিয়া ছাড়লে অচিরেই তা গেরস্তের কড়াইয়ে যাবে। ধরে সর্ষেবাটা দিয়ে মেখে খাবে তারা। আপাতত তাই গাপ্পিতেই ভরসা রাখতে চাইছে পুরসভা। এদিকে ডেঙ্গুর মরশুমে এডিস ইজিপ্টাই ঠেকাতে মাছ ছাড়ার আবেদন নিয়ে আমজনতার আবদার লেগেই রয়েছে। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ জানিয়েছেন, গাপ্পি-তেলাপিয়ার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনও ভূমিকাই নেই।
কেন এমন? ডেঙ্গুর বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশাকে পতঙ্গবিদরা বলেন ‘স্মল কন্টেনার ব্রিডার’। অর্থাৎ এই মশা ছোট পাত্রে জন্মায়। মুখ্য পতঙ্গবিদের কথায়, ডেঙ্গুর মশা এডিস ইজিপ্টাই মূলত বংশ বিস্তার করে ফুলদানির জমা জল, ডাবের খোলা, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের আইসক্রিম কাপ, ছাদে পড়ে থাকা মাটির হাঁড়িতে বৃষ্টির জমা জলে। এই সব জায়গায় গাপ্পি মাছ ছাড়া অসম্ভব।
কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদের বক্তব্য, নর্দমায় কিংবা থমকে থাকা জলাশয়ে মূলত জন্মায় কিউলেক্স মশা। ফলে ডেঙ্গু ঠেকাতে গেলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় জোড় দিতে হবে। গাপ্পি মাছ ডেঙ্গু আটকে দেবে, সাধারণ মানুষের এই ধারণাটাই ভুল বলে জানিয়েছেন পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ। কলকাতার নর্দমায় সাধারণত দুই ধরনের মাছের দেখা মেলে। একটি প্যানচকস প্যানচকস আর অন্যটি গাপ্পি। গাপ্পি মাছ ছাড়ার মূল শর্ত হল তা ‘পেরেনিয়াল ওয়াটারবডি’-তে ছাড়তে হবে। অর্থাৎ এমন জায়গায় ছাড়তে হবে যেখানে জল শুকোয় না।