'বাংলা মাধ্যমে পড়েও ঝরঝরে ইংরেজি লেখা যায়', ছাত্রের চিঠিতে আবেগতাড়িত হুগলির স্কুলের শিক্ষক
এই সময় | ২৮ জুলাই ২০২৪
সুজয় মুখোপাধ্যায়, তুহিনা মণ্ডল| এই সময় ডিজিটাল
'টু দ্য হেডমাস্টার, স্যার আই বেগ টু...'
নিয়মের ছকে ভার্ব, অ্যাডজেকটিভ মেনে প্রধান শিক্ষককে লেখা ছাত্রের চিঠি। হেতু অসুস্থতার জন্য ছুটি প্রার্থনা। সাদা কাগজে ইংরেজি হরফে লেখা সেই চিঠিতে দু-চার জায়গায় কাটাকাটিও করেছে ক্লাস নাইনের ছাত্র প্রকাশ খামারু। নীল কালিতে লেখা লাইনগুলো সরলরেখায় চলেনি। কিন্তু, এই 'পরিচ্ছন্ন' ইংরেজি চিঠির ভাষায় মুগ্ধ হুগলির বৈঁচিগ্রাম বি এ মুখার্জি ফ্রি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সীমান্ত গুহ ঠাকুরতা। তিনি এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। বাংলা মাধ্যমের ছাত্র বিদেশি ভাষায় এক বিন্দু ভুল চুক করেনি। বাংলা মাধ্যমে পড়েও ঝরঝরে ইংরাজি লেখা বা বলা যায়? প্রশ্নের পোক্ত জবাব এই চিঠি। প্রধান শিক্ষকের সেই পোস্ট এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমান্তের 'মন ভালো করার পোস্ট' ঘুরছে। আসলে ছেঁড়া ইউনিফর্মে এক কিশোর যখন একপাতা ছুটির আবেদন নির্ভুল ইংরেজিতে লিখে তাঁর কাছে জমা দিয়েছিল তিনি তা বিশ্বাস করতে পারেননি। 'কে লিখে দিয়েছে?' ভেসে গিয়েছিল নির্মম প্রশ্নবাণ। ছাত্রের সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল, ‘স্যার আমি’। কিন্তু, হেড মাস্টার মানলেন কই! তাঁর অকপট শব্দের দৌড়, 'বটে! আরেকবার লিখতে পারবি?’
এরপরেই হেড মাস্টারের সামনে বসে কলম চালিয়েছিল ক্লাস নাইনের সীমান্ত। পাঁচ মিনিট পর শুধু একটা প্রশ্ন যায় প্রধান শিক্ষকের দিকে, 'স্যার, শেষে কি ইয়োর ফেইথফুলি লিখব?’ প্রধান শিক্ষকের জবাব ছিল ‘না, ইয়োর্স ফেইথফুলি’। নাহ্ মুখস্ত করে কলম চালায়নি প্রকাশ। বাংলা মাধ্যমে পড়েই নির্ভুল ইংরেজি লেখা রপ্ত করেছিল সে।
প্রধান শিক্ষক সীমান্ত গুহ ঠাকুরতার মনে তখন 'ডি লা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস' থেকে শুরু করে 'ইউরেকা ইউরেকা' অনেক কিছুই চলছে। বাংলা মাধ্যমে পড়ছে ইংরেজিতে একটু ভুল থাকবেই! এই কটাক্ষবাণকে কষিয়ে জবাব দিয়েছে তাঁর খুদে অস্ত্র বুঝতে দেরি লাগেনি এই শিক্ষকের। তাঁর জীবনের এই খাঁটি সঞ্চয় তিনি লিখেছিলেন সোশ্যাল মি়ডিয়ার পাতায়। বর্তমানে সেই ‘গপ্পো’ ভাইরাল।
সীমান্ত গুহ ঠাকুরতা 'এই সময়'-কে বলেন, ' প্রকাশ স্থানীয় এক কৃষকের সন্তান। প্রথম থেকে এই স্কুলেই পড়াশোনা করে। অসুস্থতার জন্য ২৬ জুলাই আমার কাছে ছুটির আবেদন দিতে এসেছিল। সেই সময় আমি জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি। শান্ত, ভদ্র ছেলে হিসেবে স্কুলে ওর সুনাম রয়েছে।'
তাঁর সংযোজন, 'সমস্ত ছাত্রদের আমরা ভালো করেই শেখানোর চেষ্টা করি। ইংরেজি মাধ্যম হোক বা বাংলা মাধ্যম ভাষাটা সমস্ত স্কুলেই ভালো করে পড়ানো হয়। নবম শ্রেণির বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াও ঝরঝরে ইংরেজি লিখতে পারে। প্রকাশের লেখা চিঠিতে তাই আবেগ চেপে রাখতে পারিনি।' অন্যদিকে, যাকে নিয়ে এত হইচই সেই প্রকাশ অবশ্য নির্বিকার। মন দিয়ে ক্লাস করে বলে জানায় খুদে। সেই দিনও একই চেষ্টা করেছিল। ইংরেজি ক্লাসেও তো চিঠি লিখতে দেয়! তাহলে কী এমন ঘটল যে…? সরল প্রশ্ন প্রকাশের।