ইলিশ না নিয়েই ঘাটে মৎস্যজীবীরা, আবহাওয়ার কড়া সতর্কতা উপকূলে
এই সময় | ২৮ জুলাই ২০২৪
এই সময়, কাকদ্বীপ: ফের একটি দুর্যোগের মুখে সুন্দরবনের উপকূল এলাকা। আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেই শনিবার থেকে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করে দিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের সবক’টি উপকূল থানায় মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত উপকূলের মৎস্যজীবীদের নদী এবং সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।যদিও এই মুহূর্তে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরায় এমনিতেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে ট্রলার সব বিভিন্ন ঘাটে নোঙর করা রয়েছে। তবে ছোট ভুটভুটি নিয়ে যাঁরা সুন্দরবনের নদী এবং খাঁড়িতে মাছ ধরেন তাঁদের বারংবার সতর্ক করা হয়েছে। জলপথে সুন্দরবন পুলিশ মাইকে সতর্ক করছে। বকখালি, গঙ্গাসাগর, ফ্রেজারগঞ্জ পর্যটনকেন্দ্রে মাইকে প্রচার করে পর্যটকদের সাবধান করছেন সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা।
গত পূর্ণিমার কটালেই নদী এবং সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে গঙ্গাসাগর উপকূল এবং মৌসুনি দ্বীপে ব্যাপক ভাঙন হয়েছিল। আসন্ন নিম্নচাপের প্রভাবে নদী এবং সমুদ্রের জলস্তর স্বাভাবিকের থেকে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নদী এবং সমুদ্র ধীরে ধীরে উত্তাল হতে থাকায় পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে কড়াকড়ি করা হয়েছে।
হাওয়া অফিস বলছে, নিম্নচাপটি বর্তমানে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপর থাকলেও আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার গতিপথ বদলাতে পারে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সরতে পারে বাংলার উপর থেকে। ধীরে ধীরে এটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে ঝাড়খণ্ড ও উত্তর ওডিশার অভিমুখে এগিয়ে যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
আগামী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণবঙ্গে দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়া জেলাতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। উপকূলবর্তী সব জেলাই দিনভর মেঘের চাদরে ঢাকা থাকবে। আগামী সাত দিন দক্ষিণবঙ্গে স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের কর্তারা। পাশাপাশি আগামী দু’দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি থাকবে উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায়।
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার প্রভাব পড়ছে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রেও। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে গভীর সমুদ্রে ইলিশের দেখা নেই। তেল পুড়িয়ে বার বার ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে গিয়ে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন ট্রলার মালিকরা। পর্যাপ্ত ইলিশ না পেয়ে আশাভঙ্গ সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের।
খারাপ আবহাওয়ার জেরে সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠায় বাধ্য হয়ে শুক্রবার রাত থেকে ঘাটে ফিরে আসতে হচ্ছে ট্রলারগুলিকে। পর্যাপ্ত ইলিশ না পেয়ে বিভন্ন সামুদ্রিক মাছ নিয়ে বেশির ভাগ ট্রলার ঘাটে ফিরেছে। অনেক ট্রলার আবার ইলিশের আশায় ঘাটে না ফিরে ইতিমধ্যে সমুদ্র ঘেরা সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের পাশে নোঙর করতে শুরু করেছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে ইলিশের ঝাঁকের দেখা মিলবে না বলে জানিয়েছেন সদ্য ফিরে আসা অভিজ্ঞ মৎস্যজীবীদের একাংশ। ফলে বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ মিলতে আরও বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্যজীবী সংগঠনের কর্মকর্তারা।
কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘মরসুমের শুরু থেকে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে এ ভাবে ধাক্কা খেতে হবে ভাবতে পারিনি। বারে বারে খারাপ আবহাওয়ার মুখে পড়ে বেশির ভাগ ট্রলার ঘাটে ফিরে আসে। ইলিশ ধরতে গেলে ট্রলারকে গভীর সমুদ্রে ঘুরতে হয়। উত্তাল সমুদ্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাল ফেলেও পযাপ্ত ইলিশের দেখা মেলেনি। গভীর সমুদ্রে যাতায়াতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ রয়েছে। যে পরিমান ইলিশ পেয়েছে, তাতে যাতায়াতের খরচ উঠবে না ট্রলার মালিকদের।’
শনিবার বিকেলে নামখানা ঘাটে ফিরে আসা এক ট্রলারের মাঝি সুমন্ত দাস বলেন, ‘সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ চলছে। এই ঢেউয়ের মধ্যে জাল পাতাই দুস্কর। কোনও বছর সমুদ্রে ইলিশের এত খরা ছিল না। এখন যা পরিস্থিতি, খারাপ আবহাওয়া না কাটা পর্যন্ত বোধ হয় ইলিশ মিলবে না।’