• তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে দলের পঞ্চায়েত সদস্যরা বিধায়কের দ্বারস্থ! কী ঘটল মুর্শিদাবাদে? ...
    আজকাল | ২৯ জুলাই ২০২৪
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত মুর্শিদাবাদের সুতি বিধানসভার অন্তর্গত বহুতালী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং স্থানীয় বিধায়কের দ্বারস্থ হলেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই নির্বাচিত কিছু তৃণমূল সদস্য এবং অঞ্চল সভাপতি। 

    ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান হাসান শেখ-সহ কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্যের অভিযোগ, বহুতালী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ওহিদা খাতুন এবং তাঁর স্বামী আব্দুল শেখ সরকারি প্রকল্পের অর্থ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন এবং বেশ কিছু জায়গায় সরকারি জমি জোর করে দখল করে নিয়েছেন। 

    গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২৫ আসন বিশিষ্ট বহুতালী গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেস ১৬ টি আসন থেকে জয়ী হয়। বিজেপি তিনটি, কংগ্রেস দু'টি, সিপিএম একটি এবং নির্দল প্রতীকের প্রার্থীরা তিনটি আসন থেকে জয়লাভ করেছিল। তৃণমূল সুত্রের খবর, এরপর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ স্মৃতি খাতুনের নাম ওই পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে বাকি সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রধান নির্বাচনের দিন কয়েকজন বিরোধী দল এবং কয়েকজন তৃণমূল কংগ্রেস সদস্যের সমর্থন নিয়ে ওহিদা খাতুন ওই পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হন। 

    তৃণমূল কংগ্রেসের বহুতালী অঞ্চল সভাপতি নাসিরউদ্দিন বিশ্বাস রাজু বলেন, 'ওহিদা খাতুন পঞ্চায়েতের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকে তৃণমূলের প্রতীকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কোনও কাজ করতে পারছেন না। বিরোধী দলের সদস্যদেরকে দিয়ে তিনি সমস্ত কাজ করাচ্ছেন। তার ফলে মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছচ্ছে কংগ্রেস-বিজেপির হাত ধরেই এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে এবং তৃণমূলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।'

    পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাসান শেখ অভিযোগ করেন, 'পঞ্চায়েত প্রধান ওহিদা খাতুন এবং তার স্বামী আব্দুল শেখ (ওই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান) গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে মেদের মাঠের নালার উপর ক্রস বাঁধ তৈরি করেছেন এবং সেখানকার জমে থাকা জলে মাছ চাষ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। লভ্যাংশের এক টাকাও পঞ্চায়েত অফিসে জমা পড়ছে না।'

    দলের রাজ্য সভাপতি এবং সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাসকে করা লিখিত অভিযোগে পঞ্চায়েতের সদস্য এবং অঞ্চল সভাপতি জানিয়েছেন, বহুতালী গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকায় রাস্তা এবং ড্রেন বেহাল অবস্থা রয়েছে। সেগুলির সংস্কার না করে পঞ্চায়েত প্রধান কাদুয়া মাঠ এলাকায় নিজের জমির কাছে পঞ্চায়েতের 'নিজস্ব তহবিল' বৃদ্ধি করার নামে স্কিমের বহু টাকা ব্যয় করে নিজস্ব বাগান তৈরির কাজে লাগাচ্ছেন। লিখিত অভিযোগে তৃণমূলের কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য জানিয়েছেন, বিঘার পর বিঘা সরকারি জমি পঞ্চায়েত প্রধান দখল করে নিয়ে সেখানে নিজের বাগান তৈরি করেছেন এবং এলাকার একটি ছোট নদী দখল করে তার উপর ক্রস বাঁধ তৈরি করে নদী থেকে কোটি কোটি টাকার বালি তুলে বিক্রি করে দিয়েছেন। পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, 'আমার স্বামীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ডেকে অঞ্চল সভাপতি ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিকে পঞ্চায়েত প্রধান করা হয়েছিল এবং সেই সময়ে পঞ্চায়েতে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি হয়। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে একটি 'রিট পিটিশন' জমা হয়েছে। দুর্নীতি হওয়া অর্থের ভাগ অঞ্চল সভাপতি এবং তাঁর পরিবারের লোকেরাও পেয়েছে। সেই প্রমাণও আমাদের কাছে আছে।'

    যদিও অঞ্চল সভাপতি নিজের বিরুদ্ধে ওটা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'একজন কন্ট্রাক্টার হিসেবে পঞ্চায়েতের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে কাজ করার জন্য আমার একাউন্টে টাকা ঢুকেছে। কোনও বেনিয়ম আমি করিনি। ' সুতির তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বলেন, 'এটি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়ে আমি মন্তব্য করবো না।'
  • Link to this news (আজকাল)