• দরিদ্র পরিবারের প্রকাশের ইংরেজি চিঠি ভাইরাল! বাংলা মাধ্যম স্কুলে ঠিক কী হয়েছিল, জানুন আসল সত্য...
    আজকাল | ২৯ জুলাই ২০২৪
  • রিয়া পাত্র

    বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের ইংরেজি ভাষার জ্ঞান ভালো নয় একেবারেই, কিংবা, দিনে-দিনে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার-শিক্ষার চল বাড়লেও ইংরেজি-ভীতি কাটছে না বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের, এই আলোচনা ইদানিংসময়ে প্রায়ই শোনা যায়। বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়ারা অনেক সময় ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াতে গিয়েও সমস্যার সম্মুখীন হন। বিভিন্ন বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল অনেক সময়ই বাংলার শিক্ষিকাদের জন্য ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়া চাইছে। কারণ কী? কারণ ওই একটা ধারণা। বাংলা মাধ্যমের সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা ইংরেজি ভাল জানে না। এই ঘটনায় রাজনৈতিক আলোচনার পরিসর আছে বিস্তর। কেউ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আঙুল তোলেন, কেউ কাঠগড়ায় দাঁড় করান বাম জমানার সিদ্ধান্তকে। 

    তবে এসব আলোচনাকে মুখে আঙুল দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে একটি চিঠি। সাদা কাগজে ভাঙাচোরা কিন্তু গোছানো, স্পষ্ট ইংরেজিতে লেখা। বৈঁচির প্রকাশ খামারুর ছুটির আবেদনপত্র সেটি। ওই চিঠি এখন সমাজমাধ্যমে ঘুরছে। উত্তর দিচ্ছে বেশ কিছু প্রশ্নের। 

    ঘটনা একটু বিস্তারিত বলা যাক। সমাজমাধ্যমের দৌলতে আজকাল বহু ঘটনা আমাদের সামনে উঠে আসে, যা কিছু উঠে আসা একান্ত জরুরি। প্রকাশের চিঠি তেমনই এক চিঠি। বৈঁচি বি এল মুখার্জি'জ ফ্রি ইন্সটিটিউশন (এইচ এস)-এর নবম শ্রেণির পড়ুয়া প্রকাশ। ওই স্কুলের টিচার ইনচার্জ সীমান্ত গুহঠাকুরতা খুদে পড়ুয়ার ওই চিঠি প্রকাশ্যে এনেছেন সমজমাধ্যমে। তাতে তিনি চিঠি যেমন দিয়েছেন, তেমনই লিখেছেন তার পিছনের গল্প।

    বিষয়টা এরকম-টিফিনের পর ডাক্তার দেখাতে যাবার আবেদন জানিয়ে চিঠি এনেছিল প্রকাশ। খাতার ছেঁড়া পাতায় নির্ভুল ইংরেজিতে লেখা 'অ্যাপ্লিকেশন'। এত নিখুঁত? কিছুটা অবাক হয়েছিলেন সীমান্ত গুহঠাকুরতা। ভেবেছিলেন, বুঝি অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়েছে চিঠি। প্রশ্ন করেছিলেন, 'আর একবার লিখতে পারবি'? উত্তর এসেছিল 'বেশ'। ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় তৈরি চিঠি। তবু খটকা জেগেছিল, মুখস্থ কি? চিঠি পড়ে তাজ্জব শিক্ষক, বিষয় এক হলেও, লেখা অনেকটাই আলাদা। ভুল নেই বানানে, নেই বাক্য গঠনেও।

    তারপরেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, সমাজমাধ্যমে সকলের সামনে নিয়ে আসবেন প্রকাশের চিঠি। যেখানে অসুস্থ প্রকাশ, রোল নম্বর ৬৩, চতুর্থ পিরিয়ডের পর ছুটি চেয়ে চিঠি লিখেছে।

    সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে চিঠি। অনেকেই প্রকাশের উন্নতি চাইছেন, অনেকেই মনে করছেন সে 'অন্ধকার খনির ভেতর হীরকখণ্ড।' যিনি এই হীরকখণ্ড খুঁজে বের করলেন, সেই সীমান্ত গুহঠাকুরতা সঙ্গে যোগাযোগ করা গেল। বললেন, 'হতদরিদ্র বলতে যা বুঝি, প্রকাশ তেমন পরিবারের। ক্লাসেও তথাকথিত ব্যাক বেঞ্চার। ব্যবহারে লাজুক।' তাই তার পড়াশোনা বিস্তারিত তথ্য সেভাবে ছিল না। কিন্তু এই চিঠি অবাক করেছে। তিনি হতবাক, আপ্লুত। কিন্তু আচমকা সমজমাধ্যমে প্রকাশ কেন? কারণ, যাতে অন্যান্য সকালেই জানতে পারেন প্রকাশদের কথা। সীমান্ত মনে করেন, এই যে বারবার বলা হয়, বাংলা মাধ্যমের স্কুল গুলিতে ইংরেজি শেখানো হয় না, এর পিছনে আদতে রয়েছে ক্যাপিটালিজম। এই ধারণা তৈরি করা হচ্ছে দিনে দিনে। 

    সরকারি বাংলা মাধ্যমে কি ইংরেজি পড়ানো হয় না সত্যি? প্রকাশের ইংরেজি শিক্ষক সিদ্ধার্থ শঙ্কর বিশ্বাস বলছেন এই ধারণা ভ্রান্ত। তৈরি করা। বলছেন, 'আসলে এখন পাশ ফেল নেই, নিয়মের কড়াকড়িতে শাসন ঠিক মতো করা যায় না। ভিত একটু কাঁচা থেকে যায়। একথা ঠিক। কিন্তু তাতে শিক্ষকরা ইংরেজি শেখানোয় খামতি রাখেন না।' প্তকাশদের স্কুলে তিনি রয়েছেন ছ'বছর। জানালেন টেক্সট, গ্রামার, রাইটিংসে জোর দিয়েছেন। নিজের সবটা দেন স্কুল পড়ুয়াদের জন্য। আসলে নিঁখুত বানান-বাক্যগঠনের প্রকাশরা রয়েছে। তাদের প্রকাশ ঘটে না সবসময়।
  • Link to this news (আজকাল)