নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ‘দলে পদ পাওয়ার পর নেতারা জেলা সভানেত্রী, বিধায়কদের সম্মান করছেন না। দলে ইচ্ছেমতো লাঠি ঘোরাচ্ছেন। ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন।’ এই ভাষাতেই দলের নেতাদের তুলোধোনা করলেন ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা। শনিবার হলদিয়া টাউনশিপে একটি অডিটোরিয়ামের তমলুকের নবনির্বাচিত সাংসদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংবর্ধনার অনুষ্ঠান ছিল। সেই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ছত্রে ছত্রে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন ক্রিকেটার বিধায়ক। পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন বলেও দু’হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে দেখান।
ময়নার বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে দলের সহ সভাপতি আশিস মণ্ডলের এই মুহূর্তে সাপে নেউলে সম্পর্ক। বিধায়ককে শিক্ষা দিতে আশিসবাবু নব নির্বাচিত সাংসদকে নিজের এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। সংগঠনে কে বড় তা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে রেষারেষি চরম জায়গায় পৌঁছেছে। লোকসভা ভোটের সময় দু’জনের মধ্যে হাতহাতির অবস্থা হয়েছিল। শনিবারের সভায় সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন অশোক। ওই ঘটনায় জেলা সভানেত্রী তাপসী মণ্ডলকে বিচারের দায়িত্ব দিয়েছেন ময়নার বিধায়ক। হলদিয়ায় ওই অনুষ্ঠানে অশোক আসলে জেলা সহ সভাপতি আশিস মণ্ডলের উদ্দেশে চাঁচাছোলা ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। ওই সংবর্ধনা সভায় ময়নার বিধায়ক আরও বলেন, সংগঠন মজবুত করতে হবে। সংগঠনে যাঁরা উপরে আছেন তাঁদের সম্মান করতে হবে। জেলা সভানেত্রী, বিধায়কদের কেউ সম্মান করেন না। সহ সভাপতিকে সম্মান করেন না। প্রাক্তন জেলা সভাপতিকে কেউ পাত্তা দেন না। পার্টিতে পদ পেয়ে ভাবছেন, ‘আমিই সব। আমি পদ পেয়েছি তাই আমিই লাঠি ঘোরাব।’
ময়নার বিজেপি বিধায়ক বলেন, আগে নিজেদের জিততে হবে। তারপর তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে মোকাবিলা। তৃণমূল কংগ্রেস আমাদের কাছে নস্যি। বিধানসভায় ওরা ২১৪, আর আমরা ৭০জন। তবুও বিধানসভায় আমরা ওদের ছেড়ে কথা বলি না। দলের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা জরুরি। তাই অঞ্চলভিত্তিক সমন্বয় কমিটি গড়া হোক। সবাইকে মর্যাদা দিতে হবে। ধরাকে সরা জ্ঞান করা একদম উচিত নয়। এই মানসিকতার বদল ঘটাতেই হবে। ২০২৬সালের আগে দলকে মজবুত করতে হলে সমন্বয়ের উপর জোর দেওয়া দরকার। লোকসভা ভোটে আমরা জয়ী হয়েছি। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে গোটা লোকসভা এলাকায় উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে। তারসঙ্গে সংগঠনেও জোর দিতে হবে।
বিজেপিতে অশোক দিন্দা নবাগত। বিরোধী দলনেতার হাত ধরে পার্টিতে এসে তিনি ময়না বিধানসভা থেকে প্রথমবার প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। কিন্তু, ময়না বিধানসভার দীর্ঘদিনের লড়াকু নেতা আশিস মণ্ডল। দীর্ঘদিন ধরে পার্টির জেলা সহ সভাপতি। পার্টিতে তাঁর উত্থান আটকে। এই অবস্থায় বিধায়কের সঙ্গে আশিসবাবুর সংঘাত বাড়ছে। বিধায়ককে ‘শিক্ষা’ দিতে আশিসবাবুর হাতিয়ার তমলুকের সাংসদ। শনিবারই আশিসবাবুর উদ্যোগে তমলুকের সাংসদ পিপুলবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েতের সাতকালুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশা পরিদর্শনে যান। বিয়ষটি ভালো চোখে দেখছেন না অশোক।
বিজেপির জেলা সহ সভাপতি আশিস মণ্ডল বলেন, আমি পার্টিতে কারও সঙ্গে রেষারেষিতে নেই। সাংগঠনিক দায়িত্বে থেকে যেটুকু করা প্রয়োজন সেটাই করি। তার বাইরে কোনওকিছুতে আমি হস্তক্ষেপ করি না।