নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: মোটা গোঁফ, সঙ্গে বিকট সাজ। চায়ের দোকানে ঢুকে একের পর এক মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যবাণী। তন্ত্রসাধনায় নাকি সে সিদ্ধহস্ত। মুখে যা বলেন তাই ঘটে। যজ্ঞ করে মানুষের সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। এক-একজনের পরিবারে এক এক রকমের সমস্যার কথা বলত সে। ভয়ঙ্কর দিন ঘনিয়ে আসছে, এই বলে মানুষকে ভয় দেখাত। যাতে খারাপ কিছু না হয়, সেই ভয়ে সাধুর শরণাপন্ন হতো অনেকে। এই সাধুর আবার বেশ কয়েকজন চ্যালাও আছে। এক এক ব্যক্তিকে এক এক চ্যালার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে হোমযজ্ঞ করে রোজগার করার চেষ্টা চালাত। দিনের পর দিন এভাবে লোক ঠকিয়ে ‘তোলা’ আদায়ের রীতিমতো চক্র গড়ে ওঠে। রবিবার সেই চক্রেরই দুই ভণ্ড সাধুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস।
বহরমপুরের দয়ানগর এলাকায় গত প্রায় তিন মাস ধরে এক সাধু স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ। তার কয়েকজন সঙ্গীও রয়েছে। কিছুদিন আগে একটি দোকানে আগুন লেগে যাবে বলে ভবিষ্যবাণী করে সাধু। তারপর সত্যিই একদিন ওই দোকানে আগুন ধরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়, রাতের বেলা ওই সাধু সেই দোকানে আগুন লাগিয়েছে। তারপর খাগড়া ফাঁড়িতে অভিযোগ জানান বাসিন্দারা। তারপর থেকে বেশ কিছুদিন সাধুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিন দুপুরে ফের ওই সাধুর দুই সঙ্গী এলাকায় ঘুরে মানুষজনকে ভয় দেখাতে থাকে। তখনই স্থানীয় বাসিন্দারা খাগড়া ফাঁড়িতে গিয়ে ফের বিক্ষোভে শামিল হন। তারপরই পুলিস গিয়ে দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে। পুলিস দু’জনকে গাড়িতে তুললে উত্তেজিত জনতা সেই গাড়ির মধ্যেই তাদের মারধর শুরু করে। এই ঘটনায় খাগড়া ফাঁড়িতে বেশ উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিস কোনওরকমে দুই ভণ্ডকে উদ্ধার করে বহরমপুর থানায় নিয়ে আসে। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতদের নাম ত্রিনাথ সেন ও রিঙ্কু নন্দী। তাদের বাড়ি বহরমপুরের দয়ানগরে।
বহরমপুর থানার এক পুলিস অফিসার বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ আমরা শুনেছি। অবিলম্বে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হচ্ছে। মূল অভিযুক্তকে ধরার ব্যাপারে আমরা খোঁজ চালাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজা মুখোপাধ্যায় বলেন, ভণ্ড সাধু ও তান্ত্রিক সেজে এই এলাকার মানুষকে অভিশাপ দিত। ভয় দেখিয়ে বলত, তন্ত্রসাধনা ও যজ্ঞ করলে সব সমস্যার সমাধান হবে। একজনকে বাবা বানিয়ে গোটা চক্র পরিচালনা হয়। ওই সাধু বাবা বিভিন্ন বাড়িতে তাদের এজেন্টদের ঢুকিয়ে দিত। একটা গোটা চক্র গত তিন চার মাস ধরে দয়ানগর এলাকায় এসব করে বেড়াচ্ছে। আমরা পুলিসকে জানালেও প্রথমে কোনও গুরুত্ব দেয়নি। এদিন দু’জনকে আমরা ধরে পুলিসের হাতে তুলে দিয়েছি। এদের প্রধান কাজ এইসব বুজরুকি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতানো। বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র লুটপাট করা। এদের মূল মাথাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিসকে বলব। তা না হলে বহরমপুরে বহু পরিবার এদের হাতে নিঃস্ব হবে। • নিজস্ব