লাভপুর ব্লক থেকে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম গাছ নির্মূল করতে শুরু সাফাই অভিযান
বর্তমান | ২৯ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, বোলপুর: শুধু নির্মল অভিযানই নয়, লক্ষ্য রাজ্যের মধ্যে প্রথম পার্থেনিয়াম মুক্ত ব্লকের স্বীকৃতি। সেই কাজে এবার পুরোদমে ঝাঁপাল লাভপুর ব্লক প্রশাসন। এই মর্মে রবিবার সংশ্লিষ্ট ব্লকের ১১টি অঞ্চলে এক হাজার করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের মাধ্যমে জোরকদমে শুরু হয়েছে বিষাক্ত এই গাছ নিধন অভিযান। নিয়মিত সাফাই অভিযান ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্থেনিয়াম গজিয়ে ওঠা বীরভূম জেলায় নতুন ঘটনা নয়। বর্ষাকাল এলেই এই গাছ আরও তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে। তার অন্যথা হয়নি লাভপুরেও। ব্লকটির রাস্তার দু’পাশ লক্ষ লক্ষ পার্থেনিয়াম গাছে ভরে উঠেছিল। দিন কয়েক আগে এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ। এই মর্মে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে অভিযান শুরুর দিন হিসেবে রবিবারকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, যা আগামী দুই মাস টানা চলবে। লবণ জল দিয়ে নিধন করার পাশাপাশি, সেই জায়গায় শাল, সেগুন সহ অন্যান্য ফলমূলের গাছ লাগানোর কর্মসূচিও একই দিনে শুরু হয়েছে। বিধায়কের উদ্যোগে ব্লক প্রশাসনের এই কর্মসূচিকে লাভপুরের বাসিন্দারা স্বাগত জানিয়েছেন।
পার্থেনিয়াম মূলত বিদেশি গাছ হলেও বর্তমানে ভারতবর্ষের রাস্তাঘাট, পরিত্যক্ত জায়গা সহ সর্বত্রই এই গাছ দেখা যায়। উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে জানা যায় পঞ্চাশের দশকে আমেরিকা থেকে গমের সঙ্গে কোনওভাবে মিশে গিয়ে পার্থেনিয়ামের বীজ ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। এটি এক বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় গাছ। কোনওরকম পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠে। চার মাসের মধ্যে জীবন চক্র সম্পূর্ণ হওয়ার ফলে এই গাছ ফাঁকা জায়গায় অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ তথা বিশ্বভারতীর বোটানি বিভাগের অধ্যাপক বম্বা দাম বলেন, এই গাছ যেকোনও মাটিতেই সহজে জন্মায়। মাত্র একটি পার্থেনিয়াম গাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার বীজ তৈরি হয়। এই গাছের সাদা রঙের ক্ষুদ্র ফুলের রেণু এতটাই হালকা হয় যে, বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। ফলে জোরে হওয়া বা ঝড় হলেই এই গাছের বীজ ছড়িয়ে পড়ে। পার্থেনিয়ামের বিষ ‘সেসকুইটারপেন ল্যাকটোন’ নামে পরিচিত। এর বিষক্রিয়া মানুষের ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি, চুলকানি, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি রোগের অন্যতম বড় কারণ এই পার্থেনিয়াম।
সম্প্রতি লাভপুরে যত্রতত্র বিষাক্ত এই গাছ ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে, সংশ্লিষ্ট ব্লকের প্রাথমিক হাসপাতালগুলিতে হাঁপানি ও ত্বকের রোগীর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল। মাঠে-ঘাটে কাজ করার দরুণ চাষিরাই এই গাছের বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছিলেন। বিষয়টি লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহের নজরে আসতেই তিনি ব্লক প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর পার্থেনিয়াম থেকে পরিত্রাণ ও বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে সম্প্রতি বৈঠকও হয়। তার প্রেক্ষিতে ব্লক প্রশাসন এদিন লাভপুরের বিপ্রটিকুরি অঞ্চল থেকে এই অভিযান শুরু করে। বিধায়ক বলেন, এই কাজের জন্য ব্লকের প্রতিটি অঞ্চলে এক হাজার করে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করা হয়েছে। টানা দু’মাস ধরে পার্থেনিয়াম নির্মূল অভিযান চলবে। যেহেতু, এখন বর্ষাকাল তাই নিধন অভিযানের পর সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলিতে শাল, সেগুন ও অন্যান্য মূল্যবান ফলের চারাগাছও রোপণ করা শুরু হয়েছে। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে। সবুজে ভরে উঠবে লাভপুর ব্লক। আমাদের লক্ষ্য প্রথম লাভপুরকে পার্থেনিয়াম মুক্ত ব্লক হিসাবে স্বীকৃতি আদায়। সেই কাজে ব্লক প্রশাসন যেভাবে ঝাঁপিয়েছে, তাতে তাদের ধন্যবাদ জানাই। ( নিজস্ব চিত্র)