পিনাকী ধোলে, গোয়ালতোড়: জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে কাজু চাষ হলেও সরকারি উদ্যোগে কোনও কাজু প্রসেসিং ইউনিট নেই। তাই পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের পাথরপাড়া অঞ্চলে ৫০ একরের বেশি জমিতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কাজু প্রসেসিং ইউনিট তৈরির উদ্যোগ নেয় রাজ্য। বসানো হয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ব্লকের বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রায় ৫০জন মহিলাকে। অথচ সেই প্রসেসিং ইউনিটের বিল্ডিং এখন এক মন্ত্রীর ‘প্রিয়’ এনজিওর দখলে! প্রসেসিং ইউনিটের বিল্ডিংয়ের গায়ে লাগানো হয়েছে সেই এনজিওর বোর্ড! জায়গাটি ঘিরে দেওয়া হয়েছে কাঁটাতার দিয়ে। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ছে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘কাজু প্রসেসিংয়ের পাইলট প্রজেক্ট’!
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, শালবনী বিধানসভার গোয়ালতোড়ের পাথরপাড়া অঞ্চলে প্রায় ৫০ একরের বেশি খাস জমি রয়েছে। কয়েক বছর আগে ওই জমিতে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের(পিইউপির) অধীনে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়। এলাকার মানুষ যাতে ওই জমি ব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন, সেটাই প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পিইউপির। ওই জমিতেই আবার ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের অধীনে একাধিক জীবিকা নির্বাহ প্রকল্প নেওয়া হয়। সেইসঙ্গে কাজু প্রসেসিং ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও সেই জমিই বর্তমানে একটি এনজিওর দখলে আছে। কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে সমগ্র এলাকা। বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র আট লক্ষ টাকার বিনিময়ে ৫০ একরের বেশি সরকারি জমি পাঁচ বছরের জন্য ওই এনজিওকে দেওয়া হয়েছে। তারা নাকি উন্নত চাষাবাদ করবে। সূত্রের খবর, ওই এনজিওর সঙ্গে এক মন্ত্রীর সখ্যতা রয়েছে! তিনিই নাকি পঞ্চায়েত সমিতির বিভিন্ন কাগজপত্রে সই করিয়ে সেই জমি ব্যবহারের অনুমতিপত্র প্রদান করেছেন। অনেক কর্মাধ্যক্ষ প্রথমে সই করতে রাজি হননি। পরে তাঁদের স্থানীয় পার্টিঅফিসে ডেকে সই করানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে, জমি ব্যবহারের ব্যাপারে একাধিক শর্ত দেওয়া হয়েছিল ওই এনজিওকে। সরকারি জমিতে কংক্রিটের পাকা নির্মাণ তৈরি নিষিদ্ধ হলেও একাধিক নির্মাণকাজ শুরু করেছে এনজিওটি। ওই জমিতে থাকা কাজু প্রসেসিং ইউনিটও এখন ওই এনজিওর দখলে। নবনির্মিত ভবন এখন এনজিওর গোডাউনে পরিণত হয়েছে। সরকারি ভবনে লাগানো হয়েছে এনজিওর বোর্ড! এমনকী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নামে যে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছিল, তা এখন ব্যবহার করছে ওই সংস্থাটি। এদিকে বিল উঠছে গোষ্ঠীর নামে!
এনিয়ে স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত ফোনে বলেন, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। সেই প্রকল্প চালাতে পারছিলাম না বলে ‘টেগর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট’কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশ সেবার কাজ করবে বলেই তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জমি দেওয়া হয়নি।
যদিও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীনবন্ধু দে বলেন, কাজু প্রসেসিং ইউনিটটি এনজিওকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ওরা কেন তা ব্যবহার করছে, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।