এই সময়, কলকাতা ও নয়াদিল্লি: নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাইক বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে রাজ্য বিধানসভার পাশাপাশি দিল্লিতে সংসদের দুই কক্ষে জোরগলায় প্রতিবাদ করতে চলেছে তৃণমূল। নীতি আয়োগের বৈঠকে বাংলার দাবিদাওয়া নিয়ে বক্তব্য পেশের সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে শনিবারই প্রতিবাদী হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। কংগ্রেস, আপ, ডিএমকে, ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চার মতো ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলিও পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের।
আজ, সোমবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে এই ইস্যুতে সুর চড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় রবিবার বলেন, ‘আমাদের দলের সদস্যরা নিশ্চয়ই এর প্রতিবাদ করবেন। ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন নিয়ে সভায় এখন আলোচনা চলছে। শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে এই বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রী তোলার চেষ্টা করেছিলেন। ফলে ওই বৈঠকে যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে বাধা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে নিশ্চয়ই দলের কেউ না কেউ বিধানসভায় প্রতিবাদ করবেন।’
আবার দিল্লিতে সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হচ্ছে আজ থেকে৷ জোড়াফুল শিবির সূত্রের খবর, আজ লোকসভা ও রাজ্যসভা— সংসদের দুই কক্ষেই সোচ্চার হবেন দলীয় সাংসদরা৷ এই ইস্যুতে তাঁদের সমর্থনে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক অন্য রাজনৈতিক দলের সাংসদরাও এগিয়ে আসতে পারেন বলেও মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
বিশেষ করে কংগ্রেস, ডিএমকে, ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চার মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করলেও যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে আজ বিরোধী শিবির এককাট্টা হয়ে আক্রমণ শানাতে পারে বলে আঁচ করছে কেন্দ্রের সরকারপক্ষও।
কংগ্রেসের সাংসদ মণিকম টেগোর এ দিন বলেন, ‘একজন বর্ষীয়ান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্র যে আচরণ করেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক এবং সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংসদে এর আগে বহুবার বিরোধী দলের সাংসদদের মাইক বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ এবার নীতি আয়োগের বৈঠকেও একই ঘটনা ঘটল৷ এ ভাবে মাইক বন্ধ করে গোটা দেশের সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করতে পারবে না বিজেপি৷’
শিবসেনার (ইউবিটি) তরফে সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘যে ভাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক৷ আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ বিরোধী শিবির সামগ্রিক ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে নিশানা করায় ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যে সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূলের ওজনও আরও বাড়ল বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসে মমতা নিজেই প্রথম প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। বৈঠকে তাঁকে বলার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। বারবার বেল বাজিয়ে ভাষণ থামিয়ে দিতে বলা হয় বলেও মন্তব্য করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মানতে চাননি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূল আজ নীতি আয়োগের বৈঠকের ইস্যুতে প্রতিবাদী হলে পাল্টা রণকৌশলও ঠিক করে রাখছে বিরোধী বিজেপি শিবির।
বিধানসভায় বিজেপির সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘তৃণমূল কী করবে, সেটা তাদের বিষয়। তবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, মাইক বন্ধ করে দেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসত্য। এর কোনও ভিত্তি নেই। আমাদেরও স্পষ্ট বক্তব্য, এই সব নাটক করে কোনও লাভ হবে না।’
পাল্টা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের চ্যালেঞ্জ, ‘নীতি আয়োগের বৈঠকের নিশ্চয়ই ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়। সেই ফুটেজ প্রকাশ করা হোক। সেই ফুটেজ সামনে এলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, বৈঠকে কাকে কতক্ষণ বলতে দেওয়া হয়েছে।’