বাংলায় বিজেপির লোকসভা আসন কেন ১৮ থেকে কমে একধাক্কায় ১২-তে এসে ঠেকেছে, তা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে পদ্ম-শিবিরে। জেলাভিত্তিক রিপোর্টও পৌঁছে গিয়েছে দিল্লি। এ বার হারের কারণকে দূরে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছেন বাংলার গেরুয়া নেতারা। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সংখ্যাগুরু ভোট এককাট্টা করার রাস্তায় হাঁটলেই ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে সাফল্য মিলবে।সে কারণেই তিনি দলের সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেওয়ার পক্ষেও সম্প্রতি সওয়াল করেছিলেন দলের বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে। তবে শুভেন্দুর এই ‘কট্টর লাইন’ বঙ্গ-বিজেপিতে চ্যালেঞ্জহীন নয়। সুকান্ত মজুমদার শিবিরের অনেকেই মনে করছেন, বাংলায় সংখ্যাগুরু ভোট একশো শতাংশ এককাট্টা হওয়া কার্যত অসম্ভব। তাই মেরুকরণের পথে না হেঁটে, কী ভাবে রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের মোকাবিলা করা যায়, সেই পথ খোঁজা উচিত।
গত এক মাসে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি থেকে শুভেন্দু বার্তা দিয়েছেন, আর পাঁচ শতাংশ সংখ্যাগুরু ভোট বিজেপির ঝুলিতে এলেই আসন সংখ্যার নিরিখে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে যাবে বিজেপি। তবে পদ্মের একটা বড় অংশ মনে করছে, মেরুকরণ যতটা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। নিছক ধর্মীয় কারণে বাংলায় বিজেপির ভোট বাড়ার সম্ভাবনা কম। তাঁদের ব্যাখ্যা, ভোট বাড়াতে হলে তৃণমূলের মহিলা ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাতে হবে।
তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করার পক্ষেই সওয়াল করছেন তাঁরা। রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর কথায়, ‘এ বারের লোকসভা ভোটে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার যে বড়সড় প্রভাব ফেলেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই প্রকল্পের উপভোক্তারা ঢেলে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। আমাদের এমন কিছু করতে হবে যাতে ওই উপভোক্তারা বিজেপির দিকে আকৃষ্ট হয়। তার জন্য মহিলাদের জন্য আরও ভালো কোনও প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি আমাদের দিতে হবে।’
বিজেপির এক মহিলা নেত্রীর কথায়, ‘গ্রাম-গঞ্জের অসংখ্য মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পান না। অথচ তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। সেই অংশকেই আমাদের টার্গেট করতে হবে।’ বিজেপিতে শুভেন্দুপন্থীরা অবশ্য মনে করছেন, এ সবে কোনও কাজ হবে না। কারণ, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁরা বিজেপির প্রতিশ্রুতিতে ভরসা করবেন, সেই সম্ভাবনা কম।
শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘আমরা যদি ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিই, তৃণমূল আরও বেশি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে। ভোটাররা সেটাই বিশ্বাস করে আরও বেশি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করবেন। তার থেকে সংখ্যাগুরু ভোট এককাট্টা করা অনেক সহজ।’ তবে ঘুরে দাঁড়াতে বিজেপি শেষ পর্যন্ত কোন পথে হাঁটবে, তা অবশ্য নির্ভর করছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর সিদ্ধান্তের উপর।