তুহিনা মণ্ডল, সুকৃতি ভট্টাচার্য| এই সময় ডিজিটালদুপুর ১ টা, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ধরনা স্থল। বালিশে মাথা রেখে ফোনে মন এক আন্দোলনকারীর। ধরনা মঞ্চে মেরেকেটে ৪ থেকে ৫ জনের উপস্থিতি। সোমবার কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের মঞ্চে দেখা গেল এই দৃশ্য। সপ্তাহের শুরুর দিন হলেও গত কয়েক মাস আগেও সোমবার এমন অবস্থা কিন্তু দেখা যায়নি। এদিন ৫৫০ দিনে পা দেয় তাঁদের আন্দোলন। কিন্তু, উপস্থিতির হারে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি আন্দোলনের ঝাঁঝ কমছে? সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষে যদিও দাবি করা হয়েছে, সোমবার দুপুর ১টায় সরকারি কর্মীদের অধিকাংশই অফিসে থাকেন। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের কেবলমাত্র এই সময়ে মঞ্চে পাওয়া যায়। তাই এই চিত্র। কিন্তু বিগত কয়েক সপ্তাহের চিত্র বলছে, আগের থেকে ধরনা মঞ্চে লোক কমেছে।
কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে শহিদ মিনারের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ছাতার তলায় চলছে আন্দোলন। কিন্তু, গত বছর বড়দিনের আগে ৪ শতাংশ এবং রাজ্য বাজেটে আরও ৪ শতাংশ, মোট ৮ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই হারে বেতনও ঢুকছে। আর নিয়ম অনুযায়ী, এ মাসের বেতনে ঢুকবে ইনক্রিমেন্টের টাকাও। সব মিলিয়ে খুশি রাজ্য সরকারি কর্মীদের একটি বড় অংশ। সে কারণে আন্দোলন কিছুটা ফিকে হয়েছে বলে একাংশ মনে করছেন। যদিও অনেকেরই দাবি, কয়েকদিনের ছবি দেখে আন্দোলনের রূপ ব্যাখ্যা করা উচিত নয়।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ অবশ্য প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে অনড় ছিল। সরকারি কর্মীদের এই আন্দোলনে রাজনৈতিক রঙও লেগেছিল বিস্তর। আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল একাধিক বিজেপি নেতাদের।
শুরুর দিকে মঞ্চ গমগম করত। গত কয়েক মাস আগেও ছিল এরকম চিত্র। সোমবার দেখা গেল উল্টো চিত্র। এরপরেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি আন্দোলনকারীদের উৎসাহে ভাটা পড়েছে?
বিষয়টি নিয়ে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ অবশ্য ‘এই সময়’-কে বলেন, ‘সোমবার এই সময়ে অফিস থাকে। অবসরপ্রাপ্তরাই মঞ্চে থাকেন। আন্দোলনকারীদের একাংশ একটি আরটিআই-এর কাজের জন্য গিয়েছিলেন।’ তবে আন্দোলনের প্রথম দিয়ে যে সংখ্যক উপস্থিতি থাকত, তা এখন সম্ভব নয়, তা স্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘দেড় বছর ধরে আন্দোলন চলছে। আগে রাতেও অনেকে থাকতেন। এখন আর তা সম্ভব হয় না।’
অন্যদিকে, রাজ্য সরকারি কর্মচারি পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি দীর্ঘদিন চলছে। ফলে সরকারি কর্মীদের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হয়েছে।'
রাজ্য সরকারি কর্মী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, 'বারবার আমরা বলেছিলাম ছায়া যুদ্ধ করবেন না। বারবার মুখ্যমন্ত্রী আবেদন করেছেন, আমি আবেদন করেছি আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য। আমি আবারও একই কথা বলব। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চে যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁরা রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট।’
তিনি আরও বলেন, ‘১ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেয়নি। তা সত্ত্বেও আমরা ১ তারিখে বেতন দিই। ডিএ-ও যতটা পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা রিলিজ করলেই আমরা সরকারি কর্মীদের দাবি নিয়ে ভাবব। কিন্তু, টাকা কোথায়? একটু ধৈর্য্য ধরতে বলেছিলাম। তার পরেও কেন আন্দোলন করছেন জানি না।’