ক্রেতা আছে, বিক্রেতা নেই! বিশ্বাসই আসল ‘মূল্য’ বীরভূমের সংবাদপত্র স্টলে
এই সময় | ৩০ জুলাই ২০২৪
ক্রেতা আছে, বিক্রেতা নেই। পুরো ব্যবসাটাই চলছে শুধুমাত্র বিশ্বাসের উপর। সমাজের দর্পণে প্রতিফলিত হচ্ছে মানুষের সততা। বিক্রেতাহীন সংবাদপত্রের এহেন দোকান দেখতে পাওয়া যাবে বীরভূম জেলার মল্লারপুর স্টেশনের ফ্লাইওভারের নীচে।রেল স্টেশনের ফ্লাইওভারের নীচে সাজানো সংবাদপত্র। তবে সেখানে সংবাদপত্র সাজানো থাকলেও থাকেন না বিক্রেতা। নেই কোন সিসিটিভিও। প্রত্যেকদিন সকালে সেখানে এসে নিজের পছন্দসই সংবাদপত্রটি তুলে নিয়ে বাড়ি চলে যান পাঠকরা। পরিবর্তে বিক্রেতাহীন সংবাদপত্রের দোকানের পাশের নির্দিষ্ট একটি বাক্সে রেখে যান টাকা। এমনকী, অনেকেই আছেন যাঁরা প্রত্যহ সংবাদপত্র নিয়ে গিয়ে সপ্তাহে একদিন পুরো সপ্তাহের টাকা বাক্সে ভরে দিয়ে যান।
তবে, দোকানের কোনও বিক্রেতা নেই, তেমনটা নয়। মল্লারপুর রেল স্টেশনের ফ্লাইওভারের নীচে প্রতিদিন এই নজরদারিহীন সংবাদপত্রের পসরা সাজান রাজু লেট। পেশায় সংবাদপত্রের হকার তিনি। তাই প্রত্যেকদিন সকালবেলায় সংবাদপত্র আসার সঙ্গে সঙ্গেই ফ্লাইওভারের নীচে সেই সংবাদপত্রের পসরা সাজিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন বাড়ি বাড়ি সংবাদপত্র দিতে। স্বাভাবিকভাবেই, তিনি যখন সংবাদপত্র বিক্রি করতে বেরিয়ে যান তখন থেকে ফাঁকা পড়ে থাকে তাঁর সংবাদপত্রের দোকান। আর সেখানেই পাঠকরা এসে নিজের সংবাদপত্রটি তুলে নিয়ে তার দাম রেখে দিয়ে যান সংবাদপত্রের পাশে রাখা একটি বাক্সে।
বিক্রেতা রাজু লেট বলেন, ‘পেপার যাঁরা পড়েন, তাঁরা শিক্ষিত। আর শিক্ষিতরা কোনওদিন মানুষকে ঠকান না। আমি তাঁদের বিশ্বাস করি। আমি চাই মানুষ পেপার পড়ুক, কারণ পাঠক বাড়লে আমরাও বাঁচব। সেই ভরসা থেকেই আমি প্রত্যেকদিন ফ্লাইওভরের নীচে সংবাদপত্রের পসরা সাজিয়ে সাইকেলে কাগজ বেঁধে বেরিয়ে পড়ি।’ তিনি জানান, প্রতিদিনই ফিরে এসে দেখেন সব কাগজ তো বিক্রি হয়েছেই এমনকি সমস্ত পেপারের দামও জমা হয়ে গিয়েছে বাক্সে। কখনও কারোর কাছে খুচরো না থাকলে তাঁরা পরের দিন অথবা এক সপ্তাহ পর একসঙ্গে সেই টাকা বাক্সে ভরে দিয়ে যান।
স্থানীয় এক পাঠক রানা মজুমদার বলেন, ‘এখন আমরা মোবাইলেই সব পেয়ে যাই ঠিকই কিন্তু সকালের কাগজ একবার পড়া চাই। আর সেই কারণেই রাজুর দোকান থেকে আমরা পেপার কিনে আনি। তবে ও কোনদিনই দোকানে থাকে না । দু-একদিন ওঁর সঙ্গে দেখা হয় পেপার বিক্রী করে ফেরার পথে। আমরা যাঁরা পেপার কিনি, তাঁরা প্রত্যেকদিন পেপার নেওয়ার পরে ওর দোকানের পাশে রাখা বাক্সে টাকা রেখে দিয়ে চলে যায়।’