গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে আর্থিক প্রতারণা, সোনার মূর্তি উদ্ধারে গিয়ে পিতল হাতে পেল পুলিশ
প্রতিদিন | ৩০ জুলাই ২০২৪
অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: সোনার মূর্তি উদ্ধার করতে গিয়ে মিলল পিতলের মূর্তি! শুধু তাইই নয়, অভিনব প্রতারণার হদিশ পেল পুলিশ। ঘটনায় গ্রেপ্তার এক মহিলা, আটক বাড়ির মালিক। রবিবার দুপুরের দিকে ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) রানিনগরে। পুলিশ জানায়, ধৃত মহিলার নাম হীরা বিবি। আটক ব্যক্তির নাম মোজাম্মেল শেখ। তার বাড়ি থেকেই পুলিশ ওই পিতলের লক্ষ্মীমূর্তি, ধূপধানি ও ইমিটেশনের ছ জোড়া কানের দুল উদ্ধার করেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর ছিল, মোজাম্মেল শেখের বাড়িতে সোনার মূর্তি (Gold Statue) লুকানো আছে। দিন কুড়ি আগের পাওয়া খবরের ভিত্তিতে নজরদারি চালানোর পর রবিবার সেখানে তল্লাশি চালানো হয়। তাতে মোজাম্মেল শেখের বাড়ির একটি কাঠের বাক্সের ভিতর লেপ-কাঁথার আড়াল থেকে লাল কাপড়ে বাঁধা অ্যালুমিনিয়াম হাঁড়ি উদ্ধার হয়। সেটা খুলতেই বেরিয়ে আসে একটা লক্ষ্মীমূর্তি। মূর্তিটি কীসের? স্বর্ণকারের দোকানে গেলে জানা যায়, ওটা আসলে পিতলের (Brass)। যা শুনে বাড়ির মালিক মোজাম্মেল শেখও হতাশ হয়ে পড়েন। তাঁর কথা, ”সর্বনাশ! সেলিম আমাকে এভাবে ঠকাতে পারল!”
সেলিম মানে সেলিম শেখ। কাতলামারি বাজারে তার একটি কাপড়ের দোকান আছে। সেই দোকানের আড়ালে তার যে এই প্রতারণার চক্র চলে আগে জানতে পারেনি কেউ। পুলিশের কান তো, ক্লু (Clue) খোঁজাই কাজ তার। সেলিমের নাম শোনামাত্র তদন্তকারীরা চেপে ধরে মোজাম্মেল শেখকে। কে সেলিম, কোথায় বাড়ি ? প্রশ্নে প্রশ্নে তাঁকে জর্জরিত করে তোলে। তার পরে যা জানা গেল, তা এরকম ? বছর দেড়েক আগে ওই সেলিম একদিন মোজাম্মেলের বাড়িতে এসে আলাপ জমায়। এক রহস্যজনক পরিবেশ তৈরি করে মোজাম্মেলের স্ত্রী মঞ্জুরা বিবিকে বলে, ”কাকিমা তোমার বাড়ির আশেপাশে গুপ্তধন আছে। যা তুলতে পারলে মালামাল হয়ে যাবে তোমরা।” কেমন করে জানল সে? কীভাবেই বা তা তুলতে হবে? তার পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয়। তার পরে একদিন জানায়, গুপ্তধন তোলার আগে মসজিদ-মাদ্রাসায় দান (Donate) করতে হবে, খাওয়াতে হবে অনাথদের। এভাবে একের পর এক কারণ দেখিয়ে মোজাম্মেলের কাছ থেকে টাকা হাতানো শুরু করে ওই সেলিম।
মোজাম্মেলের দুই ছেলে হাবিবুর রহমান, গোলাম কিবরিয়া শেখ জানান, “সাত হাজার টাকা দিয়ে শুরু করে কখনও পঞ্চাশ, তো কখনও পঁচাত্তর হাজার টাকা পরে তারও বেশি করে টাকা নিয়ে প্রায় ছ লক্ষেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওকে টাকা দিতে গিয়ে বাবাকে দশ কাঠা করে দুবারে এক বিঘা জমি বিক্রি করতে হয়েছে।” এই অবস্থায় মাস ছয়েক আগে অন্ধকার এক রাতে সেলিম শেখ মোজাম্মেলকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পিছনের একটি জায়গায় গর্ত করে ওই মূর্তি উদ্ধার করে। পরে লাল কাপড়ে বেঁধে তা একটা হাঁড়িতে ভরে কাঠের বাক্সে রেখে দেয়। আর জানায়, যতদিন না সে দেখতে বলে তার আগে যেন কেউ দেখার চেষ্টা না করে। নিষেধ অমান্য করে দেখতে গেলেই তার ছেলেমেয়ের ক্ষতি হবে। ভয়ে কেউ কাউকে কিছু বলেননি, এমনকি খুলে দেখতেও যাননি। উলটে ওই ছ’মাস ধরে মোজাম্মেলের স্ত্রী বাড়িতে ভালোমন্দ রান্না (Cook)করে সেলিমকে খাইয়ে এসেছেন।
কিন্তু ঘরের মধ্যে কী এমন গোপন জিনিস? তা নিয়ে মহিলা মহলের কৌতূহল গুজব হয়ে পৌঁছে যায় পুলিশের কানে। আর তার পরেই পুলিশের তৎপরতা বাড়ে। অবশেষে রবিবার ফাঁস হয় বড়সড় চক্রান্ত। পুলিশ লালকাপড়ে মোড়া হাঁড়ি খুঁজে পায়। কিন্তু তার মধ্যে সোনা নয়, পিতলের একটি লক্ষ্মীমূর্তি খুঁজে পাওয়া যায়। আর লক্ষ্মীমূর্তিতে পুলিশের হাত লাগতেই পলাতক সেলিম শেখ। পুলিশ তাকে না পেয়ে ঘটনার শাগরেদ হিসেবে স্ত্রী হীরা বিবিকে গ্রেপ্তার করেছে। এই প্রতারণা চক্রে সেলিম ছাড়াও আর কেউ জড়িত কি না, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।