অপচয় বন্ধের নামে ‘শাস্তি’ শিলিগুড়ির নেতাজি হাইস্কুলে, চাপানউতোর তুঙ্গে
বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৪
সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: অপচয় বন্ধের নামে ‘শাস্তি’! গত কয়েকদিন শিলিগুড়ির তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ৩৮ ডিগ্রির কাছাকাছি। এমন হাঁসফাঁস পরিস্থিতিতেও কয়েকদিন স্কুলের টিফিনের সময় আধঘণ্টা পাখা বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠল শিলিগুড়ির নেতাজি হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। যদিও এতে অন্যায় দেখছেন না প্রধান শিক্ষক রাজীব ঘোষ। এক্ষেত্রে তিনি ঢাল করেছেন গত মে মাসের শেষের দিকে জারি করা রাজ্য সরকারের এক নির্দেশকে। যেখানে বলা হয়েছিল, বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করতে হবে। কিন্তু অভিভাবকদের একাংশের দাবি, অপচয় বন্ধ আর খুব প্রয়োজনে ব্যবহার করাকে বোধহয় গুলিয়ে ফেলেছেন প্রধান শিক্ষক। পড়ুয়া ও অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক স্কুলে ঢোকামাত্রই তাঁর ঘরে এসি চালু হয়ে যায়। টিচার্স, কমনরুম, অফিস সর্বত্রই বনবন করে ঘোরে পাখা। অথচ, টিফিনের সময় সব ক্লাসের ফ্যান বন্ধ করে দেওয়া হয়। দাবদাহ থেকে রেহাই পেতে যখন প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা এসির ঠাণ্ডা হাওয়া ও ফ্যানের নীচে আরাম করেন, পড়ুয়ারা ঘেমেনেয়ে কাহিল।
স্কুল শুরু হয় সকাল এগারোটায়। পড়ুয়ারা তার আগেই ক্লাসে চলে আসে। কিন্তু ১১ টা বাজার পরই সব ক্লাসে ফ্যান চালু করা হয় বলে অভিযোগ। সন্তানদের এমন অবস্থা দেখে অভিভাবকদের বড় অংশ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, হিটস্ট্রোক বা গরমে পড়ুয়াদের কোনও ক্ষতি হলে তার দায় কে নেবে? তবে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কেউ এনিয়ে সামনে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। পাছে ‘কোপ’ পড়ে পড়ুয়াদের উপর। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, স্কুলশেষে ছেলেমেয়েরা কাহিল হয়ে বাড়ি ফিরছে। অনেকক্ষণ ফ্যান না চলায় তাদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এজন্য স্কুলেও যেতে চাইছে না।
প্রধান শিক্ষকের যুক্তি, গত মে মাসেই রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা এসেছে বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করার জন্য। অর্থাৎ, অপ্রয়োজনে লাইট, ফ্যান বন্ধ থাকবে। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরই ছাত্রছাত্রীদের থেকে কয়েকজনকে নিয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করেছি। অপ্রয়োজনে লাইট, ফ্যান ব্যবহার হচ্ছে কি না ও স্কুল শেষ হওয়ার পর সব ঘরের লাইট, ফ্যান বন্ধ হয়েছে কি না, সেদিকে তারা নজরদারি করে। টিফিনের সময় পড়ুয়ারা ক্লাসে থাকে না বলেই ফ্যান, লাইট বন্ধ রাখা হয়। যদিও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁরা বলেন, বহু পড়ুয়া টিফিনের সময় বাইরে না গিয়ে ক্লাসেই থাকে। অনেকে বাড়ি থেকে আনা খাবার খায় ক্লাসে বসেই। স্কুলের তুঘলকি সিদ্ধান্তে গরমে কাহিল হয়ে পড়ছে পড়ুয়ারা। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করার জন্য যদি এই পদক্ষেপ হয়, তাহলে ওই সময় প্রধান শিক্ষকের ঘরে এসি বন্ধ রাখা হোক। টিচার্স, কমন রুম ও অফিসের কাজ ফেলে যখন গল্পগুজব চলে, তখন সেখানে কেন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না? এর সদুত্তর দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক।