• ভূমিদপ্তরের পোর্টালের নামে ভুয়ো অ্যাপে প্রতারণা, সতর্কতা রাজ্যের
    বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ক্ষমতায় এসে চালু করেছিলেন ‘বাংলার ভূমি’ পোর্টাল। আম জনতা থেকে বিনিয়োগকারী—সবাই জমি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পেতে এই পোর্টালের উপর নির্ভর করেন। জমির চরিত্র পরিবর্তন হোক বা মিউটেশনের আবেদন, সবই এখন করা যায় এই পোর্টালের মাধ্যমে। তাই সরকারি এই পোর্টালের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে লোক ঠকানোর ফাঁদ পেতেছে কিছু অসাধু চক্র। তাদের কারসাজিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে জমির তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ছে। ‘বাংলার ভূমি’ নাম দিয়েই চালু করা হয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি অ্যাপ। সেখানে জমি সংক্রান্ত তথ্য তালাশের সুবিধা রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হচ্ছে সেসব তথ্য। কিন্তু এভাবে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে বিস্তর ফারাক সরকারি পোর্টালের তথ্যের। এই অবস্থায় বেসরকারি অ্যাপগুলির বৈধতা এবং খোলা বাজারে কীভাবে চালু আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রশাসনিক কর্তারাই।


    ‘বাংলার ভূমি’ নামে অন্তত চারটি অ্যাপ চলছে বলে জানা গিয়েছে। ‘ল্যান্ড রেকর্ডস’ নামেও চালু রয়েছে একটি অ্যাপ। এই অ্যাপগুলি যে রাজ্য সরকারের নয়, সে বিষয়ে মানুষকে অবগত করানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন শীর্ষ আধিকারিকরা। ‘বাংলার ভূমি’ পোর্টাল ছাড়াও জমি সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ‘জমির তথ্য’ নামে রাজ্য সরকারের একটি অ্যাপ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এক বিশেষজ্ঞ জানান, ভূমি ও ভূমিসংস্কার দপ্তরের আধিকারিকরা ‘ই-ভূচিত্র’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে কাজ করেন। এর সঙ্গে সংযোজিত রয়েছে ‘বাংলার ভূমি’ পোর্টাল এবং ‘জমির তথ্য’ অ্যাপ। ফলে ‘ই-ভূচিত্র’ ব্যবহার করে তথ্যভাণ্ডারে কোনও পরিবর্তন করলে তা সঙ্গে সঙ্গে আপডেট হয়ে যায় সরকারি পোর্টালে। একই নামে চলা বেসরকারি অ্যাপগুলিতে যা কোনওভাবে সম্ভব নয়। ফলে পুরনো বা মনগড়া তথ্যই দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি অ্যাপগুলি থেকে। 


    এক আধিকারিক জানান, কয়েক মাস আগে এক ব্যক্তি এমনই একটি বেসরকারি অ্যাপের তথ্য এনে দাবি করেন, তাঁর জমির তথ্যে ভুল রয়েছে। অথচ, সরকারি পোর্টালে তাঁর জমির পাশে যে বিবরণী দেওয়া আছে, সেখানে কোনও গরমিল পাননি তিনি। অর্থাৎ, কোনও কারণ ছাড়াই তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হল। সম্প্রতি এমনই একটি ভুয়ো অ্যাপের তথ্য তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগ করা হয় এই বলে যে, দু’টি জমির তথ্য বদলে ফেলা হয়েছে। যাবতীয় নথি খতিয়ে দেখে সেই অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে জানতে পারেন আধিকারিকরা। কয়েকজন আধিকারিকের কাছে এমনও খবর এসেছে যে, এই ধরনের অ্যাপের ভুলভাল তথ্য কাজে লাগিয়ে জমির মালিকের থেকে টাকা হাতানোর চেষ্টা চালাচ্ছে ওই অসাধু চক্র। জমির নথিতে ভুল আছে শুনলেই ছাপোষা মানুষের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সেই সুযোগে নথিপত্র ঠিক করে দেওয়ার ‘টোপ’ দিয়ে মালিকদের থেকে টাকা হাতানোর ব্যবস্থা করছে চক্রের পান্ডারা। তাই জমি-জায়গার তথ্য জানতে বা যাচাই করতে একমাত্র সরকারি পোর্টালের উপরই নির্ভর করার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। এসব বেসরকারি ও ভুয়ো অ্যাপের বিরুদ্ধে কী আইনি পদক্ষেপ করা যায়, তাও বিবেচনা করা হবে বলে জানান রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা।
  • Link to this news (বর্তমান)