নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবি নতুন করে উপস্থাপিত হওয়ায় ফের উত্তপ্ত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। এই পর্বে কামতাপুর রাজ্যের দাবি আদায়ে সশস্ত্র পন্থায় ভরসা রাখা জঙ্গি সংগঠন কেএলও সহ বিচ্ছিন্নতাবাদে বিশ্বাসী অসমের আরও কয়েকটি শক্তি ‘এক’ হয়েছে, এমন সুস্পষ্ট তথ্য পেয়েছেন রাজ্যের গোয়েন্দারা। গোটা প্রক্রিয়ার মাথায় রয়েছে কেএলও প্রধান জীবন সিংহ। পুজোর আগেই পৃথক রাজ্যের আন্দোলন শুরু হচ্ছে, এমন ইঙ্গিতও মিলেছে। লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর পদ্মপার্টির মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়করা বাংলাকে টুকরো টুকরো করার পক্ষে জোর সওয়াল শুরু করেছেন। এমনকী বাংলাকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার ‘ইন্ধন’ দিচ্ছে বিজেপির ভিন রাজ্যের এমপি।
এরকম একটা আবর্তে নতুন করে কামতাপুর রাজ্য ও পাহাড়ে জিএনএলএফ’এর মন ঘিসিংয়ের গোর্খাল্যান্ডের নয়া জিগির কেন, তা নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের অভিযোগ, কোচবিহারের পরাজয় ক্ষোভকে পুঁজি করে এমন একটা অংশ কামতাপুর রাজ্যের দাবি তুলছে, যার পিছনে ‘গেরুয়া শিবিরের’ সরাসরি ইন্ধন রয়েছে। একই ইন্ধন রয়েছে পাহাড়ের ক্ষেত্রেও। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গভাগের বিরোধিতায় তাঁর কড়া অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তবে বঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্য ভাগের বিরোধিতা করার কথা বললেও, পদ্মপার্টির বিধায়কদের একটা অংশ কিন্তু সরাসরি বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সওয়াল করে চলেছেন। রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তরের কাছে ইতিমধ্যেই খবর পৌঁছেছে, এই সব আন্দোলন হিংসাশ্রয়ী হয়ে উঠতে পারে। এমনকী রেল, রাস্তা, অর্থনৈতিক অবরোধ করে একটা অশান্তির বাতাবরণ ছড়ানোর চেষ্টাও হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতেই গত রবিবার কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কমিটি তাদের সংগঠনের নাম বদলে ‘স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিল’ করেছে। সেখানে ৭৪ জনের কমিটি গঠন করে তারা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে। যেহেতু বাংলা, বিহার ও অসম জুড়ে তাঁদের আন্দোলনের ক্ষেত্র, তাই ‘কমিটি’র বদলে তারা সংগঠনের ধাঁচাকে ‘কাউন্সিলে’ পরিণত করেছে। আর এই কমিটিই চাইছে জীবন সিংহের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘শান্তি আলোচনা’ যেন সফল হয়। অর্থাৎ, জীবন সিংহের সঙ্গে সরকারকে দ্রুত চুক্তি করতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে। এক্ষেত্রে কামতাপুর রাজ্য পুনর্গঠন, কামতাপুরী (রাজবংশী) ভাষাকে অষ্টম তফসিলের অধীনে নিয়ে আসা, অসমের কামতাপুরীদের তফসিলি উপজাতির মর্যাদা প্রদান, বিভিন্ন মামলা প্রত্যাহার, ক্ষতিগ্রস্তদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা প্রভৃতি দাবি রয়েছে। জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির লাহিড়ী ভবনে কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিলের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেখানে দুই শতাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি তপতী রায় মল্লিক বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে জীবন সিংহের ‘পিস টক’-এর বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে, সেখানে এই দাবিগুলি গৃহীত হয়েছে। সেসব চুক্তির মাধ্যমে কার্যকর করতে হবে। জীবন সিংহকে সামনে রেখেই আমাদের কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিল। ভারত সরকার জীবন সিংহকে ডেকে আনল, কিন্তু এখনও এসব কার্যকর হচ্ছে না। জীবন সিংহকে মানুষ নেতা হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছেন। মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। না হলে মানুষ গণ আন্দোলন করে তার জবাব দেবেন। আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব। সরকারের কাছে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি রাখব। সেদিকে ধাপে ধাপে এগচ্ছি। কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বুথস্তর পর্যন্ত সংগঠিত রূপ দেওয়া হবে। মানুষ পরিস্থিতি অনুসারে যে ভাবে সাড়া দেবেন, জীবন সিংহের দাবির স্বপক্ষে সেভাবেই আন্দোলন হবে।