নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: টেকনিশিয়ান বনাম পরিচালক। অচলাবস্থা অব্যাহত। দিনভর দফায় দফায় দুই শিবিরে বৈঠক-পাল্টা বৈঠকেও সমাধানসূত্র মিলল না। রাহুল মুখোপাধ্যায়কে টেকনিশিয়ানদের ‘বয়কট’-এর প্রতিবাদে এবার অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিলেন পরিচালকরা। ফলে আজ, মঙ্গলবারও ‘লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন’ শোনা যাবে না টলিপাড়ায়। সিনেমা-ধারাবাহিক সবের শ্যুটিং বন্ধ। ফলে টালিগঞ্জে ফিরে এসেছে করোনাকাল এবং ২০২১ সালের টেকনিশিয়ানদের বিক্ষোভ পর্বের স্মৃতি। সিরিয়ালগুলির নতুন পর্বের সম্প্রচারও অথই জলে। কারণ, কোনওটিরই দু’-তিন দিনের বেশি পর্ব জমানো নেই। শনিবার পরিচালকরা ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিতেই হইচই শুরু হয়ে গিয়েছিল ধারাবাহিকগুলির কলাকুশলীদের মধ্যে। রবিবার ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও সারারাত চলেছে শ্যুটিং। কিন্তু তাতে কতদূর ম্যানেজ করা যাবে? কেউ জানে না। সোমবার রাত ৯টা নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করে পরিচালকদের তরফে রাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, সকলে ইগো ছেড়ে দিন। কর্মবিরতি দু’দিন চলবে না সাতদিন, সেটা আমরা আলোচনা করে ঠিক করব।’ এই পরিস্থিতিতে ‘নিরপেক্ষ’ হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পরিচালকরা।
এদিন সকাল ১০টায় ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওয় গিয়ে দেখা যায় মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছেন একজন সিকিউরিটি গার্ড। আশপাশে কয়েকটা কুকুর। একের পর এক শ্যুটিং সেট তালাবন্ধ। সপ্তাহের প্রথমদিনেও মানুষের, গাড়ির আনাগোনা নেই। টেকনিশিয়ানদের তৎপরতা, লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের গমগম করা স্বর উধাও। দিনভর একই চিত্র ধরা পড়েছে দাসানি, ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতেও।
যদিও রবিবার সারারাত কাজ হয়েছে কিছু সিরিয়ালের। সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় শ্যুটিং সেরে বাড়ি ফিরেছেন অভিনেত্রী শ্বেতা ভট্টাচার্য। তিনি জানান, দু’দিনের বেশি ব্যাঙ্কিং নেই। আশা রাখছি মঙ্গলবার থেকে আবার শ্যুটিং শুরু হবে। একই সুর ছিল ‘কথা’ ধারাবাহিকের সুস্মিতা দে’র গলায়। এপিসোড ব্যাঙ্ক শেষ হলে কি ফের পুনর্সম্প্রচার করা হবে সিরিয়াল? পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার জানিয়েছেন, ‘জানি না কী হবে!’ এদিন সকাল পর্যন্ত ‘শুভ বিবাহ’, ‘মালাবদল’-এর মতো কয়েকটি সিরিয়ালের গোপনে (গুপী) শ্যুটিং হয়েছে বলে দাবি করেছে টেকনিশিয়ানরা। সোমবার টালিগঞ্জে বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং করেন পরিচালক সুজিত সরকার। দুপুরে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের বাড়িতে এক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টলিউডের অধিকাংশ পরিচালক। প্রায় দু’ঘণ্টার বৈঠক শেষে তাঁরা সম্মিলিতভাবে জানান, কলাকুশলীদের বিরুদ্ধে কেউই নয়। আলোচনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব শ্যুটিং শুরু করার পক্ষে সকলে। পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘নিয়মের পরিবর্তন দরকার। নইলে কখনওই এগতে পারব না।’ প্রসেনজিতের অবশ্য সাফ কথা, ‘ইন্ডাস্ট্রি একটা পরিবারের মতো। আমরা সারাজীবন লড়াই করেছি টেকনিশিয়ানদের জন্য। বর্তমানের লড়াইটা আসলে মান-সম্মানের। আলোচনা হোক, তবে কাজটা চলুক।’ পরিচালকদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রযোজকদের ফোরাম, সাপ্লায়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। যদিও এই কর্মবিরতিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘পুরোটাই পূর্ব পরিকল্পিত। তবে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি। ধারাবাহিক বন্ধ করে বিরাট ক্ষতি হয়েছে।’ পরিচালকদের মতোই সই সংগ্রহ করেছেন টেকনিশিয়ানরাও। শ্যুটিং দ্রুত শুরুর জন্য আলোচনার কথা জানিয়েছে আর্টিস্ট ফোরামও। ইম্পার তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘এই অচলাবস্থা ভীষণ হতাশাজনক।’ উল্লেখ্য, গোপনে বাংলাদেশের ওয়েব-সিরিজের শ্যুটিং করার অভিযোগে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে তিনমাসের সাসপেনশন দেয় ডিরেক্টর্স গিল্ড। পরে তা তুলেও নেয়। এই নিয়েই আপত্তি ফেডারেশনের।