জীবন বাজি রেখে লড়াই, সুন্দরবনের ৮৭ বাঘকে খাঁচাবন্দি করার পুরস্কার পেলেন প্রৌঢ় আমিরচাঁদ
বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৪
সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বারুইপুর: ২৬ ফুট লম্বা খেজুর গাছে উঠে পড়েছিল বাঘ। সেটিকে কাবু করেছিলেন। তাছাড়া তাল গাছে উঠে ঘাপটি মেরে থাকা, গোয়াল ঘরে লুকিয়ে পড়া, লাফ দিয়ে মানুষ শিকার করতে উদ্যত বাঘকেও কাবু করেছিলেন আমিরচাঁদ। এই করতে করতে ৬০ বছর বয়স হয়ে গেল। হাতে গুনে বলে দিতে পারেন, কর্মজীবনে ৮৭টি ভয়ঙ্কর বাঘকে খাঁচাবন্দি করেছেন। শুধু কি তাই! দুর্দান্ত জলদস্যুদের ধরিয়ে দিয়েছেন। চোরাশিকারিরা হরিণ মেরে চামড়া বিক্রি করত। সেরকম ১৭টি দুমূল্য মৃগচর্ম উদ্ধার করেছেন। প্রৌঢ় আমিরচাঁদ মানুষ বাঁচাতে অনেককিছুই করেছেন নিজের জীবন বাজি রেখে। সেই অসাধারণ ও চমকপ্রদ কাজগুলির জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করল বনদপ্তরের দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগ।
সুন্দরবনের যে কোনও গ্রামে বাঘ ঢুকে পড়লেই ডাক পড়ত কুলতলির দক্ষিণ দুর্গাপুরের বাসিন্দা আমিরচাঁদের। বনদপ্তরের কর্মীরা তাঁকে শ্রদ্ধা করে ছোটবাবু বলেন। সদ্য কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন আমির। সোমবার আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসে তাঁকে মঞ্চে তুলে সম্মান জানাল বনদপ্তর। চাকরির মেয়াদ বাড়ানো চিন্তাভাবনাও চলছে। আমিরচাঁদের পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও আছেন তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। ১৯৮৪ সালে ধনচি ক্যাম্পে অস্থায়ী বনকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৭ সালের ২২ জানুয়ারি সরকারিভাবে প্রথম বোটম্যান হিসেবে কুলতলি বিটে যোগ দেন। বোটম্যান থেকে ক্রমে বনরক্ষীতে পদোন্নতি। জলদস্যুদের কবল থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য প্রাক্তন বনমন্ত্রী যোগেশ বর্মন তাঁকে পুরস্কৃত করেছিলেন। বাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে ঘায়েল করার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন আমিরচাঁদ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘আমিরবাবুর কাজ দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়।’
আমিরচাঁদ গল্প শুরু করলে রাত কাবার হয়ে যায়। বলেন, ‘ধনচি ক্যাম্পে বোট থেকে রক্ষীদের বন্দুক ছিনতাই করেছিল জলদস্যুরা। সেই জলদস্যুকে ধরিয়ে দিয়েছিলাম আমি। বাঘ ধরার অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। কয়েক বছর আগে চুপড়িঝাড়া এলাকা সাতদিন ধরে বাঘের আতঙ্কে থমথম করছিল। খাঁচা পেতেও সেটিকে ধরা যাচ্ছিল না। বাঘটিকে অনেক চেষ্টার পর ধরে ফেলি আমি। মৈপীঠে ছ’দিন পর বাঘ ধরা পড়েছিল। পরিস্থিতির চাপে নেটের মধ্যে ঢুকতে হয়েছিল আমাদের। বাঘ এক লাফ দিয়ে নেটে ঝাঁপাল। ভয় না পেয়ে সেই বাঘকেও কাবু করেছিলাম।’ বাঘ নিয়ে আমিচাঁদের অভিজ্ঞতা অসীম। জানালেন, শক্তিশালী বাঘের আক্রমণের পর দুর্বল বাঘ লোকালয়ে চলে আসে। তারাই মানুষের কাছে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
সোমবার মৈপীঠের বৈকুণ্ঠপুর হাই স্কুলে এক অনুষ্ঠানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগীয় আধিকারিক নিশা গোস্বামী সম্মানিত করেন অন্য বন কর্মীদেরও। অতিরিক্ত বনবিভাগীয় আধিকারিক অনুরাগ চৌধুরী বলেন, ‘সুন্দরবনে মোট ১০১টি বাঘের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ডিভিশনে আছে ২৮টি পূর্ণবয়স্ক ও দু’টি শিশু বাঘ। নিজস্ব চিত্র