• ৩৭ বার কোপানো হয় প্রোমোটারকে, খুনের নেপথ্যে পুরনো আক্রোশ?
    বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নৃশংস, ভয়াবহ! আনন্দপুর থানা এলাকার তপসিয়া রোডে প্রোমোটারকে খুনের ঘটনায় এই দুই শব্দই যথেষ্ট। ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রকাশ্য রাস্তায় ফেলে লাগাতার ৩৭ বার কোপানো হয় আরিফ খানকে। ফালাফালা হয়ে যায় প্রোমোটারের প্রায় সর্বাঙ্গ। অপরাধবিজ্ঞান অনুযায়ী, যা ব্যক্তিগত শত্রুতার দিকেই আঙুল তুলছে। প্রোমোটার আরিফের সঙ্গে ফেরার অভিযুক্ত আব্বাসের কী এমন পুরনো আক্রোশ ছিল? যার জেরে এভাবে নৃশংসভাবে খুন হতে হল তপসিয়া রোডের ওই প্রোমোটারকে? সবদিক খোলা রেখেই তদন্ত চালাচ্ছে লালবাজারের হোমিসাইড শাখা। এই ঘটনায় এখনও মূল চক্রী আব্বাস ও তার এক সহযোগী পলাতক। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, শীঘ্রই তাদের পাকড়াও কড়া সম্ভব হবে। খুব দ্রুত তদন্তপ্রক্রিয়া চলছে।


    কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের দাবি, বাড়ি থেকে ফোন করে ডেকে আনা হয় আরিফকে। তাকে রাস্তায় তিনজন মিলে ঘিরে ধরে। এরপরেই প্রোমোটারের উপরে চড়াও হয় আততায়ীরা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বলছে, ধৃত অভিযুক্ত জাকির সহ তিনজনেরই হাতে ধারালো চপার ছিল। তিনজনে মিলেই কোপাতে শুরু করে আরিফকে। রক্তাক্ত অবস্থায় আর্তনাদ করতে করতেই ঘটনাস্থলে পড়ে যান প্রোমোটার। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, আরিফের ডান হাতের কনুইয়ের কাছে একটি বড় কোপ পড়ে। সেই কোপে প্রায় ৪ ইঞ্চি ফালা হয়ে হাত। পুলিসের দাবি, আরেকটু বেশি চাপ পড়লে, হাত সম্পূর্ণভাবে কেটে যেত। ডান কাঁধে আরও একটি গভীর ক্ষত রয়েছে। সেটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ ইঞ্চি। ক্ষত এতটাই গভীর ছিল, হাড় দেখা যাচ্ছিল। অন্যদিকে, ডান উরুর কাছে সবচেয়ে বড় ক্ষতটি হয় চপারের আঘাতে। সেটি প্রায় সাড়ে ৯ ইঞ্চি লম্বা। ডান পায়ের ওই অংশ  ফালা হয়ে একেবারে উন্মুক্ত হয়ে যায়। 


    কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ৩৭ বার একটি মানুষকে কোপানো রীতিমত আশ্চর্যের। কারও প্রতি তীব্র ঘৃণা দীর্ঘদিন ধরে জমতে জমতে এই জায়গায় পৌঁছতে পারে। ব্যক্তিগত কোনও আক্রোশই এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। এবিষয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান দিলীপ মণ্ডল বলেন, একেবারেই ব্যক্তিগত আক্রোশের জায়গা থেকে হয়েছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা অ্যান্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসওর্ডারে ভুগছে। পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে। যদিও সেই পুরনো আক্রোশটা ঠিক কোন কারণে, তা নিয়ে কিছুই মুখ খুলছে না ধৃত জাকির আলি। সোমবার তাকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়। অভিযুক্তকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
  • Link to this news (বর্তমান)