নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: অস্বাভাবিক ট্রেন লেট এখন যেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন ট্রেন লেট নিয়ে তিতিবিরক্ত নিত্যযাত্রীরা। তার বহিঃপ্রকাশও দেখা গেল সোমবার অফিস ফিরতি সময়ে। লোকাল ট্রেনের লেটের প্রতিবাদে রেল অবরোধ করেন নিত্যযাত্রীরা। টিকিয়াপাড়া স্টেশনের কাছে টানা দেড় ঘণ্টা সেই অবরোধ চলে। এরফলে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর শাখার ট্রেন চলাচল।
জানা গিয়েছে, এদিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট নাগাদ টিকিয়াপাড়া স্টেশনের কাছে রেল অবরোধ করেন নিত্যযাত্রীরা। আপ এবং ডাউন লাইনের উপর বসে পড়েন তাঁরা। বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো নিত্যযাত্রী। তাঁদের দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে চলছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর শাখার প্রতিটি লোকাল ট্রেন। প্রায় দু’বছর ধরে এই সমস্যায় জর্জরিত তাঁরা। অফিস টাইমে চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হতে হয় তাঁদের। এদিনও জলেশ্বর যাওয়ার মেমু ট্রেন প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে স্টেশন ছাড়ে। এতেই কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। স্টেশনের কাছে তাঁরা লাইনে নেমে রেল অবরোধ শুরু করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় আরপিএফ এবং রেল কর্তারা। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর শাখার প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে অমল ভৌমিক বলেন, দিনের পর দিন কেন ট্রেন লেট চলছে, তার কোনও জবাব দেওয়া হচ্ছে না। পরিষেবা স্বাভাবিক করার কোনও চেষ্টাই নেই। ডাউন বা আপ ট্রেনের অন্তত এক ঘণ্টা লেটে চলাই স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গিয়েছে। অত্যন্ত নিম্নমানের রেল পরিষেবায় আমরা ক্ষুব্ধ।
রেলযাত্রী সুপ্রিয় ঘোষাল বলেন, আমাদের এলাকা থেকে সড়কপথে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় নেই। তাই আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষকে রেলের উপর ভরসা করতে হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে রেলের পরিষেবা সমস্ত দিক থেকে নীচে নেমে গিয়েছে। এদিন একাধিক ট্রেন সময়ের চেয়ে ঘণ্টাখানেক দেরিতে ছাড়ে। রেল আমাদের একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছিল সমস্যা সমাধানের। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমরা অবরোধের পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছি।
এদিনের রেল অবরোধ চলে প্রায় সাড়ে আটটা পর্যন্ত। দেড় ঘণ্টা বিপর্যস্ত ছিল খড়্গপুর শাখার আপ এবং ডাউন লাইনের ট্রেন চলাচল। যাত্রীদের অভিযোগ নস্যাৎ করে রেল অবশ্য উল্টো দাবি করেছে। দক্ষিণপূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওমপ্রকাশ চরণ বলেন, ট্রেন লেট নিয়ে কেউ বিক্ষোভ করেননি। কিছু যাত্রী জোর করে একটি ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করেন টিকিয়াপাড়া স্টেশন থেকে। কিন্তু ওই ট্রেনটির ওই স্টেশনে দাঁড়ানোর কথা নয়। যেহেতু তাঁরা উঠতে পারেননি, তাই কয়েকজন ট্রেন অবরোধ করেন। এছাড়াও আমতা লাইনে একটি জায়গায় গাছ পড়ে যাওয়ার কারণে দেড় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ফলে সেই সমস্ত যাত্রী এই বিক্ষোভে যোগ দিয়ে দেন। এর সঙ্গে ট্রেন লেটের কোনও সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে, রেল কর্তাদের তরফে এই আশ্বাস দেওয়া হলে অবরোধ তুলে নেন নিত্যযাত্রীরা। তবে রাত পর্যন্ত অবরোধের কারণে রেল পরিষেবা ব্যাহত হয়। বেশ কিছু লোকাল ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে। নিজস্ব চিত্র