সংবাদদাতা তারকেশ্বর: শ্রাবণের দ্বিতীয় সোমবার লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর আগমনে তারকেশ্বর একপ্রকার জনসমুদ্রে পরিণত হল। লক্ষ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হওয়ায় পরিষেবা ব্যাহত হল মোবাইলের। ভিড়ের চাপে ভাঙল বাঁশের ব্যারিকেড। অসুস্থ হয়ে পড়লেন অনেকে। প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ীরাও।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, বাজিতপুর মোড় থেকে মন্দির পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গেট বসিয়ে কয়েক বছর ধরে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিস। গেটের পাশে থাকে লাইন। এ বছর সে লাইন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি পুলিস। গেট খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ মন্দিরের দিকে ছুটে গিয়েছেন। লাইন না থাকায় রাস্তাজুড়ে আটকে পড়েন বহু পুণ্যার্থী। দম আটকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ভিড়ের চাপে বেশ কয়েকজন অসুস্থও হয়ে পড়েন। ট্রেনে আসা পুণ্যার্থীদের মন্দির চত্বরে থাকা প্রসাদের দোকান পর্যন্ত যেতে দেয়নি পুলিস। মেলার সময় দোকানদার কিছু উপার্জনের আশায় থাকেন। অথচ কড়াকড়ির চোটে ব্যবসায় সমস্যা হয়েছে। দুধপুকুরের হনুমান ঘাট সংস্কারের জন্য এমনিতেই বন্ধ। অবশিষ্ট দু’টি ঘাটের মধ্যে মন্দিরের মূল ঘাটে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় মন্দিরের দুধপুকুর ছুঁতে পারেননি ভক্তরা। পুলিসের বজ্রআঁটুনির ফলে মেলার ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। ভিড় দ্রুত কমাতে বেশি সংখ্যক মানুষকে লাইন ছাড়াই মন্দির চত্বরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে স্পেশাল লাইনে ভিড় ছিল না।
সঞ্জয় রানা নামে বারাকপুর থেকে আসা এক পুণ্যার্থী জানান, তেঁতুলতলা, কালীবাড়ি মাঠ এলাকায় প্রায় দেড়শো মিটার রাস্তা দমবন্ধ অবস্থায় থাকতে হয়েছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী সিভিক ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে নিয়ম ভেঙেছেন। সারারাত পায়ে হেঁটে তারকেশ্বর এসে এই অভিজ্ঞতা আমাদের কষ্ট দিয়েছে। কয়েকটি মাত্র গেটের মাধ্যমে আমাদের মন্দিরের দিকে পাঠানো হয়েছে। গেট খোলার পর হুড়োহুড়ি করে দৌড়েছেন সবাই। দুর্ঘটনা আটকাতে এই বিষয়গুলির দিকে প্রশাসনের অবিলম্বে নজর দেওয়া উচিত। অন্যদিকে তারকেশ্বর বাজিতপুর মোড়ের কাছে মানুষের চাপে বাঁশের নড়বড়ে গেট ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে পুলিস। মোবাইল পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় প্রশাসনিক কাজকর্মে সাময়িক সমস্যা তৈরি হয় বলেও জানা গিয়েছে।
তারকেশ্বর মেলাকে নির্মল মেলা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ। প্রথম সোমবারই ব্যবসায়ীদের জরিমানা হয়। অন্যদিকে পিএইচই দপ্তরের দেওয়া জলের প্লাস্টিকের ফেলে দেওয়া খালি প্যাকেট শহরজুড়ে ছড়িয়ে বলে অভিযোগ। ভিড়ের চাপে অসুস্থ পুণ্যার্থীদের জন্য টোটো অ্যাম্বুলেন্স ও বাইকের ব্যবস্থা ছিল। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা, বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়নি। তবে ভিড় সামলাতে নাজেহাল হল প্রশাসন।