ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দপ্তরে ঘুঘুর বাসা ভাঙতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দেওয়ার পরে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে নবান্ন। এ মাসের গোড়াতেই বদলি করা হয়েছে এই দপ্তরের অধীনে বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ৪৫৬ জন আধিকারিককে। তবে স্বচ্ছতা ফেরাতে এই ঢালাও বদলিতে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী নীতি অনুসরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিভাগীয় আধিকারিকদের একাংশের।কিছু ক্ষেত্রে তুলনায় কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আধিকারিককে গুরুত্বপূর্ণ জেলায় পাঠানোর অভিযোগ যেমন উঠেছে, তেমনই শাসক দলের সংগঠনের ঘনিষ্ঠ কিছু আধিকারিককে তুলনায় নিকটবর্তী জেলায় বদলি করা হয়েছে বলেও গুঞ্জন বিভাগের অন্দরে।
জমির চরিত্র বদল বা জমির মালিকের নাম পরিবর্তনের মতো বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে দুর্নীতি ও সাধারণ মানুষের হেনস্থা বন্ধের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী যে স্বচ্ছতা আনার বার্তা দিয়েছেন, তার সঙ্গে একমত বিভাগীয় আধিকারিকদের সিংহভাগই।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরে দপ্তরের যে শীর্ষ আধিকারিকরা এই বদলির নির্দেশিকা জারি করেছেন, তাঁরা বেশকিছু ক্ষেত্রে সরকারি তথ্যভাণ্ডার কাজে লাগাননি বলে অভিযোগ উঠছে। ভূমি ও ভূমিরাজস্ব বিভাগের অন্দরে গুঞ্জন— বদলির তালিকা প্রকাশ করার সময়ে কোন অফিসার, কত দিন, কোন জায়গায় কাজ করছেন— সেই তথ্য কাজে লাগানো হয়নি। ফলে সবার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বদলি নীতি অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বিভাগের আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগের তির দপ্তরের একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার অফিসারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তাঁর একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় রাজ্যের শাসক দলের সমর্থিত রেভিনিউ অফিসার্স সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। সেই কারণেই বিরোধী সংগঠনের সদস্যদের বদলির নামে হয়রানি করা হচ্ছে। ভূমিরাজস্ব বিভাগের আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, শাসক দলের সমর্থকদের সে ভাবে বদলি করা হয়নি। হলেও শুধুমাত্র পদ বদল করে কৌশলে একই জায়গায় রেখে দেওয়া হয়েছে।
যেমন— জলপাইগুড়ি সদরের ভূমিরাজস্ব আধিকারিকের পদ বদলে ওই জেলাতেই রেখে দেওয়া হয়েছে। আবার আলিপুরের এক আধিকারিককে দক্ষিণ ২৪ পরগনারই জমি অধিগ্রহণ বিভাগে বদলি করা হয়েছে। উল্টোদিকে, কলকাতার দুই অভিজ্ঞ আধিকারিককে বদলি করা হয়েছে তেহট্ট ও পুরুলিয়ায়। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বদলির ক্ষেত্রে অনেক সময়ে অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ।
যেমন— কলকাতা লাগোয়া শহরতলি এলাকার মধ্যে সোনারপুরে ভূমিরাজস্ব আধিকারিকের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেখানে বদলি করে আনা হয়েছে তুলনামূলক ভাবে কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পূর্ব মেদিনীপুরের এক আধিকারিককে।
দপ্তরের অন্দরে গুঞ্জন, মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন জেলাস্তরেও দুর্নীতি দূর করতে ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দপ্তরের খোলনলচে বদলে দিতে। এই সিদ্ধান্তে কাজে অসুবিধা হবে বলে প্রশাসনিক বৈঠকে আমলাদের কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এই অসুবিধার তত্ত্বকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেছিলেন, নতুন লোক গিয়ে কাজ শিখে নেবেন। তিনি বিএলএলআরও দপ্তরে ডব্লিউবিসিএস আফিসারদের নিয়োগেরও পরামর্শ দিয়েছিলেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ আধিকারিককে কেন বদলি করা হলো, কেন আরও বেশি সংখ্যায় হলো না— তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। পশ্চিমবঙ্গ ল্যান্ড অ্যান্ড রিফর্মস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশেন, অ্যাসোসিয়েশেন অফ ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্মস অফিসার্স-এর মতো সংগঠনগুলি বদলি নীতি নিয়ে দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বিবেক কুমারের সঙ্গে একাধিক বার দেখা করতে চেয়েও পারেননি বলেও জানিয়েছেন। যদিও এই ব্যাপারে বিবেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।