শেখর চন্দ্র, আসানসোল: রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীরও দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নাম নিয়ে বহিরাগতদের কাছে অপমানিত, হেনস্তার ও শারীরিক নিগ্রহের শিকার হয়েই এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য দেবাশিস বন্দোপাধ্যায়। কিন্তু উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত নির্দেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে রাজভবন। মঙ্গলবার নিজের বাড়িতে প্রেস কনফারেন্স করে এই কথা জানালেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি জানান, আতঙ্কিত হয়ে আপাতত বড়িতে বসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম চালিয়ে যাবেন।
সোমবার কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের কাছে হেনস্তার শিকার হন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। যেভাবে উপাচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ করে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়, তাতে আতঙ্কিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন উপাচার্য। ঘটনায় এত বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন তিনি। এই ঘটনার কথা পুলিশ কমিশনারকেও জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীকেও ই-মেলে বিস্তারিতভাবে সব জানিয়েছেন। অচলাবস্থা কাটাতে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন উপাচার্য।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে আইনি লড়াইয়ের জন্য খরচ করা হচ্ছে প্রায় ৮০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা। অভিযোগে লাগাতার আন্দোলন চলছে। যার ফলে ব্যহত হচ্ছে প্রশাসনিক কাজকর্ম। সোমবার পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করতে তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম স্বাভাবিক করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান উপাচার্য। কিন্তু বৈঠকে না বসে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে উপাচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায়য়ের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পড়ুয়াদের হাতে কার্যত আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ করেন উপাচার্য। বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসতে হয় তাঁকে। উপাচার্যের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এই পড়ুয়ারা এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরাই ওই উপাচার্যকে বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলন করে। রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। রাজ্যপাল ওই উপাচার্যকে বরখাস্ত করেছিলেন।
উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তার পরই আমাকে পাঠানো হয় অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিতে। গত ১৩ মাসে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। ইউজিসি ইস্টার্ন জোনের মধ্যে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে কয়েকদিন আগে। যখন এইসব কাজ নিয়ে আমি দৌড়ঝাঁপ করছি। দিল্লি যাচ্ছি। তখন হঠাৎ করেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নাম নিয়ে বহিরাগতরা আন্দোলন শুরু করেছে। বেআইনিভাবে আমার এবং রেজিস্ট্রারের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে তখন প্রাক্তন উপাচার্য ও তার কয়েকজন অনুগামী একের পর এক মামলায় আমাদেরকে জড়াচ্ছেন। উচ্চ আদালতে তারা হেরে যাচ্ছেন তার পরও নতুন নতুন মামলা করছেন। এর মধ্যে শুরু হয়েছে পড়ুয়াদের লেলিয়ে দিয়ে রাজনীতি।”