• পশ্চিম মেদিনীপুর: স্কুলে আয়রন ট্যাবলেট খেতে অনীহা ৬০ শতাংশ নাবালিকা ভুগছে রক্তাল্পতায় 
    বর্তমান | ৩১ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: জোগান পর্যাপ্ত। সমস্ত স্কুলেই ছাত্রীদের নিয়মিত দেওয়া হয় আয়রন ট্যাবলেট। কিন্তু, বহু ছাত্রীই তা হাতে করে নিলেও খায় না বলে অভিযোগ। যার ফলে নাবালিকাদের মধ্যে ক্রমশই বাড়ছে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার সমস্যা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই মুহূর্তে প্রায় ৬০শতাংশ নাবালিকাই এই রোগে ভুগছে। ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলার স্বাস্থ্যদপ্তর।


    জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, এই সমস্যা সত্যিই উদ্বেগের। এর সঙ্গে প্রসবের সময় প্রসূতির মৃত্যু, শিশু মৃত্যুর ঘটনাও আনুষঙ্গিকভাবে জড়িত। কীভাবে এনিয়ে নাবালিকাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা যায়, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই মুহূর্তে মোট জনসংখ্যার ২২শতাংশ রক্তাল্পতায় ভুগছে। জেলায় এই মুহূর্তে ১৮-র কম বয়সি নাবালিকার সংখ্যা প্রায় সাত লক্ষ। এরমধ্যে চার লক্ষ ২০হাজার নাবালিকা রক্তাল্পতায় ভুগছে। অর্থাৎ, মোট নাবালিকার ৬০শতাংশই এই রোগের কবলে। ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্য মহলে। চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, সুষম খাদ্যাভ্যাস না থাকা এবং অপুষ্টির কারণে রক্তাল্পতা হয়ে থাকে। তবে, এর প্রবণতা মহিলাদের মধ্যেই বেশি। কেন? চিকিত্সকদের দাবি, প্রতি মাসে মেয়েদের ঋতুস্রাবের জন্য অনেকটা রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে আয়রনের মাত্রা এই সময়ে অনেকটাই কমে যায়। এতে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ কম হয়। তাছাড়া স্কুলে এসে নেতিয়ে পড়া, স্কুলে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। তা দূর করতেই ২০১২ সাল থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সব স্কুলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছেলেমেয়েদের সপ্তাহে একটি করে খনিজ উপাদান সম্পন্ন ওই ট্যাবলেট খাওয়ানোর প্রকল্প শুরু হয় রাজ্যে।


    যদিও সেই ট্যাবলেটই খাচ্ছে না পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের নিয়মিত ট্যাবলেট না খাওয়ানোর অভিযোগ উঠছে স্কুলগুলির বিরুদ্ধেও। জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি বলেন, অনেক স্কুলের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ পাচ্ছি। ওষুধ খেলে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। নির্ভয়ে খাওয়ানো যায়। স্কুলগুলি যে কেন তা বুঝতে চাইছে না, সেটা সত্যি দুর্ভাগ্যের। মৌপাল দেশপ্রাণ স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূন পড়িয়া বলেন, আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকারা নিয়মিত খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। অনেক পড়ুয়া দুষ্টুমি করে খায় না। তবে, অধিকাংশ পড়ুয়াই আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করে। শুধু তাই নয়, গর্ভবতী মহিলাদেরও নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। কিন্তু, অনেকক্ষেত্রেই প্রসূতিরা আয়রন ট্যাবলেট খান না। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের ট্যাবলেট না-খেলে মা ও শিশুর অপুষ্টিতে ভোগার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আরও অনেক বিপদ ঘটতে পারে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানোর ব্যাপারে লাগাতার সচেতনতার কাজ চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)