সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: কথায় বলে, নদীর পাড়ে বাস, ভাবনা বারোমাস। কিন্তু সামশেরগঞ্জে আর ভাবনারও অবকাশ নেই। সেখানে এখন শুধুই আতঙ্ক। শিবপুরের পর এবার ভাঙনের কবলে প্রতাপগঞ্জ। সোমবার গভীর রাতে প্রায় ৫০ মিটার পাড় নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। পাড় ভাঙতে ভাঙতে নদী প্রায় মাটির বাঁধের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। প্রতাপগঞ্জ গ্রাম, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র ও প্রাথমিক স্কুলকে সুরক্ষিত রেখেছে মাটির বাঁধটি। এই বাঁধে ধস নামলেই তলিয়ে যাবে গোটা প্রতাপগঞ্জ। তাই নিদ্রাবিহীন রাত কাটাচ্ছেন প্রতাপগঞ্জের কয়েক হাজার মানুষ। সকালেই চোখের সামনে দশটি পাকা বাড়ি চলে গিয়েছে গঙ্গাগর্ভে। রাত থেকেই শেষ সম্বলটুকু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। নতুন শিবপুর এলাকায় পাকা বাড়ি সহ চাষের জমি জলের স্রোতে নদীতে চলে গিয়েছে। কয়েকটি বড় গাছও জলে পড়ে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গঙ্গার জল বাড়ছে। এই জল নীচে নামতে শুরু করলেই, একের পর এক বাড়ি, জমি, বাগান ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
প্রতিবছর বর্ষায় গঙ্গার জলস্তর বাড়লেই সিঁদুরে মেঘ দেখেন সামশেরগঞ্জবাসী। বর্ষা এলেই ভয়ঙ্কর রূপ নেয় গঙ্গা। পাকা বাড়ি থেকে চাষের জমি ও গাছপালা সব গিলে খায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। সোমবার সকালে শিবপুরের ভয়াবহ ভাঙন বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে এলাকাবাসীর। সকালের ঘণ্টা দু’য়েক তাণ্ডব চালিয়ে ক্ষান্ত হয় গঙ্গা। সকাল থেকেই নতুন আস্তানার খোঁজে নামেন গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের অস্থায়ী শিবিরে ঠাঁই হয় তাঁদের। রাত গভীর হতেই প্রায় দেড় কিমি দূরে পার্শ্ববর্তী প্রতাপগঞ্জ পঞ্চায়েতের লোহরপুরে ফের ভাঙন দেখা দেয়। নদী ফুঁসতে ফুঁসতে প্রতাপগঞ্জের মাটির বাঁধের কাছে চলে আসে। বাঁধ থেকে ফুঁসে ওঠা নদীর দূরত্ব আর মাত্র ৫০ মিটার। বাঁধের পরেই জনবসতি। সেখানে কয়েকশো পরিবারের বাস। আর প্রায় মিটার পঞ্চাশেক দূরেই উত্তর চাচন্ড প্রাথমিক স্কুল ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র। যেভাবে গঙ্গায় ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে স্কুল ও শিক্ষাকেন্দ্রটি সহ গোটা গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। আতঙ্কে ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জায়গায় জায়গায় নৌকোয় করে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা চাইছি স্থানীয় সমাধান। পাথর দিয়ে নদী পাড় বাঁধানো হোক। নইলে গোটা গ্রামটাই নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে। প্রতাপগঞ্জের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম, বাবু সরকার বলেন, প্রতিদিন একটু একটু করে জল বাড়ছে। এরপর বৃষ্টি বাড়লে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে, সেই ভেবেই ঘুম হয় না। বাড়ি, চাষের জমি, বাগান একে একে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। মাথার গোঁজার ছাদটুকুও হয়তো এবার নদীতে চলে যাবে।
সামশেরগঞ্জের বিডিও সুজিতচন্দ্র লোধ বলেন, গঙ্গায় জল ও জলের স্রোত অনেক বেড়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। সেচদপ্তর প্রতিদিনই জলস্ফীতির পরিমাণ নজরে রাখে। কিছু মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।