নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি ও সংবাদদাতা, বোলপুর: গোরুপাচার মামলায় জামিন পেয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, ওরফে কেষ্ট। কিন্তু তিহার জেল থেকে মুক্তি কবে মিলবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কেননা, তিনি ইডি হেফাজতে রয়েছেন। সেই মামলার শুনানি রয়েছে সামনেই। তাতে জামিন পেলে হয়তো জেলমুক্তির দিশা মিলবে। সেই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। ফলে, এদিন দিল্লি থেকে দাদার জামিনের খবরে আনন্দে আত্মহারা হলেও উচ্ছ্বাসে গা ভাসিয়ে দেননি কেউই। আবির খেলা, মিষ্টিমুখ থেকে বিরত থেকেছেন। বরং ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করেছেন সকলেই। ফিরলেই ঘটা করে ‘বীর’-এর সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তলে তলে তারই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন কেষ্ট ঘনিষ্ঠরা। এদিকে, অনুব্রতর জামিনে খুশি তাঁর পরিবারের লোকেরা। কিন্তু বোলপুরের স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের উপর তাঁদের বেশ অভিমান। বোলপুরের বাড়িতে বসে অনুব্রতর বড়দাদা সুব্রত মণ্ডল বলছিলেন, ‘ভাই জামিন পেয়েছে, আমাদের কাছে খুব ভালো খবর। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, দুর্দিনে দল পাশে থাকলেও বোলপুরের স্থানীয় নেতারা আমাদের খোঁজখবরই নেননি।’
২০২২ সালের ১১ আগস্ট। দিনটি ছিল রাখি পূর্ণিমা। গোরুপাচার মামলায় বোলপুরের নিচুপট্টির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত। পরে আর্থিক তছরুপের অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)ও তাঁকে হেফাজতে নেয়। দু’বছর ধরে কেষ্ট তিহার জেলে বন্দি। তাঁর গ্রেপ্তারের পরপরই দ্রুত বদলাতে থাকে বীরভূম জেলা রাজনীতির সমীকরণ। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী জেলার দায়িত্ব নিলেও পরবর্তীতে গঠন করেন জেলা কোর কমিটি। উত্থান হতে শুরু করে অনুব্রতর বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত কাজল শেখের। জেলা পরিষদের সভাধিপতি হওয়ার সুবাদে কাজলকেও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে, অনুব্রত অনুগামীরা কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। তবে, তৃণমূল সুপ্রিমো বরাবরই অনুব্রতর পাশেই ছিলেন। তাঁকে বীরের মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। এখনও তাঁর পাশেই রয়েছেন। লোকসভা ভোটের প্রচারে জেলায় এসে তিনি বলেছিলেন, ভোট ফুরোলেই কেষ্টকে ওরা ছেড়ে দেবে। এদিন গোরুপাচার মামলায় জামিন পাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর ‘পূর্বাভাস’ মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন জেলা তৃণমূল নেতারা। তাঁরা এমনও ধরে নিয়েছেন, এবারের রাখিবন্ধন উৎসবেই হয়তো খুশির খবর শোনাবে দিল্লির আদালত।
তার আগে জেলায় অনুব্রত অনুগামীদের উচ্ছ্বাসের কিছু ছবি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। দুবরাজপুরের ছাত্র নেতা রাকিবুল খান ফেসবুক লাইভে এসে আনন্দে কাঁদতে শুরু করে দেন। পার্টি অফিসগুলিতে একে অপরকে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। দিল্লিতে কেষ্টর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া তৃণমূলের জেলা কমিটির এক নেতার ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, আগামী ২২ আগস্ট ইডির মামলা দিল্লি আদালতে উঠবে। সেদিন জামিনের আবেদন জমা করা হবে। ফলে রাখি উৎসব চলাকালীনই কেষ্টর জামিনের প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এতদিন ধরে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছিল। আশা করছি, ইডির মামলাতেও কেষ্টদা জামিন পাবেন।’ সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, আমাদের জন্য আনন্দের খবর। সব মামলা থেকে কবে কেষ্ট মুক্তি পায়, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছি। ফিরে এলে সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে।’ অন্যদিকে, কেষ্টর বিরোধী মুখ বলে পরিচিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ বলেন, ‘উনি আমাদের অভিভাবক। ওঁর হাত ধরেই আমার রাজনীতিতে আসা। এতদিন টিম অনুব্রতই কাজ করেছে। ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটে সেই টিমই জেলায় কাজ করবে।’ বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, এত নাচানাচির কিছু নেই। এখনও অনেকগুলো মামলা বাকি রয়েছে। তবে বিচারব্যবস্থাকে আমরা সম্মান জানাই।’