নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: অনলাইন পোর্টালে নাম তোলার ব্যাপারে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না ইটভাটার মালিকরা। কারণ, পোর্টালে নাম উঠে গেলেই রাজস্ব দেওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ির সম্মুখীন হতে হবে। আর তা এড়াতেই পোর্টাল বিমুখ হচ্ছেন ইটভাটা মালিকরা। ইতিমধ্যেই কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন মালিকরা। দেড় বছরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেই তালিকায় রয়েছে শাসকদলের বেশ কিছু নেতার ইটভাটাও। যারা বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ইটভাটার কর দেয়নি রাজ্য সরকারকে। ইটভাটাগুলির পোর্টালে নাম না তোলার পাশাপাশি কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যেই প্রশাসনের নজরে এসেছে। যে সমস্ত ইটভাটা পোর্টালে নাম তোলার ব্যাপারে অনীহা দেখাবে তাদের নোটিস ধরাবে জেলা প্রশাসন।
নদীয়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক(ভূমি ও ভূমি সংস্কার) প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইটভাটাগুলিকে পোর্টালে নাম তোলার জন্য বলা হচ্ছে। ব্লকের ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গেও বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলায় ৩২৭টি বৈধ ইটভাটা রয়েছে। অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১৬০টি। কিন্তু, মাত্র ৬২টি ইটভাটা পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করানোর জন্য এগিয়ে এসেছে। অর্থাৎ, নদীয়া জেলার চারশোর বেশি ইটভাটা পোর্টালে নাম তোলার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেখাচ্ছে না। যারা কর ফাঁকি দিচ্ছে সেইরকম বেশ কিছু ইটভাটার নামে থানার এফআইআরও করা হয়েছে। কিন্তু, তারপরেও রাজস্ব দেওয়ার ব্যাপারে কোনওরকম উৎসাহ দেখাচ্ছেন না ইটভাটার মালিকরা। এমনটাই দাবি জেলা প্রশাসনের।
কারা কারা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তার তদন্তে নেমে প্রশাসন বেশ কিছু হাই প্রোফাইল নেতার নামে থাকা ইটভাটার হদিশ পেয়েছে। চাপড়া ব্লকের তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতার ইটভাটা বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে কোনওরকম কর প্রদান করেনি। শাসকদলের ছত্রছায়ায় কর ফাঁকি দিয়েই তিনি রমরমিয়ে ভাটা চালাচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে। চলতি লোকসভা নির্বাচনেও চুটিয়ে ভোট প্রচার করেছেন শাসকদলের হয়ে। অথচ সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ায় সেই তৃণমূল নেতার নাম উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, চাপড়া ব্লকের ভূমি সংস্কার দপ্তর তরফে মাস ছয় আগে ওই নেতার ইটভাটা নিয়ে থানায় এফআইআর করা হয়েছিল। কিন্তু, তারপরেও রাজস্ব দেওয়ার ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই।
চাপড়ার বিএলএলআরও গোকুল মণ্ডল বলেন, বিগত ছ’ সাত মাসে ১২টি ইটভাটার নামে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। পোর্টালের নির্ধারিত রাজস্ব অনুযায়ী কিছু ইটভাটা টাকা দিয়েছে। আর যারা রাজস্ব দেয়নি সেই তালিকাও আমরা তৈরি করেছি। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠিয়েছি। নির্দেশমতো আমরা ব্যবস্থা নেব।
এক আধিকারিক জানান, রাজ্য সরকারের পরিবেশ পোর্টালে সিটিও’র জন্য ইটভাটার মালিককে আবেদন করতে হয়। অনুমোদন এলে মালিক ইটভাটা চালাতে পারেন। কিন্তু, এর ফলে পুরো ব্যবসাটাই সরকারের নজরে চলে আসবে। তখন কর ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হবে না।