নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কেউ পেয়েছিলেন কৃষিদপ্তরে কাজ। আইকার্ডে বড় বড় করে লেখা ছিল বাঁকুড়া ডিভিশন কৃষিদপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কারও কাছে আবার পৌঁছে যায় কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের ভুয়ো জয়েনিং লেটার। তাতে আবার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের স্ট্যাম্প। তার পাশেই আছে হাসপাতাল সুপারের সই করা সরকারি স্ট্যাম্প। এই সমস্তটাই ভুয়ো। চাকরির ভুয়ো কাগজপত্র দিয়ে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণা করা হয়। কালীগঞ্জের একাধিক যুবক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এনিয়ে মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর পুলিস সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন প্রতারিতরা। তাঁদের অভিযোগ, ১২ জনের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক স্কুল শিক্ষক, সেনাকর্মী ও তাঁর ভাই প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যদিও সেই অভিযোগ স্কুল শিক্ষক ও সেনাকর্মী অস্বীকার করেছেন। পুলিস সুপার অমরনাথ কে বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, কালীগঞ্জের দেবগ্রাম, হাতগাছা সহ বিভিন্ন এলাকার যুবকদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে ২০১৮ সাল নাগাদ দফায় দফায় টাকা নেওয়া হয়। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে দেবগ্রামের কামারি হাইস্কুলের ভূগোলের প্রাক্তন শিক্ষক অমিতাভ দেবনাথ, সেনাকর্মী ইমরান আনসারি ও তার ভাই শারুক আনসারির। ওই স্কুল শিক্ষক বর্তমানে বনগাঁর রামকৃষ্ণপুর হাইস্কুলে চাকরি করেন। শুধু কালীগঞ্জ নয়, পার্শ্ববর্তী থানা পলাশীপাড়ার বড় নলদহ, এমনকী মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে চাকরির নামে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতারিতরা রাজ্যপালকে মেল করে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তারপর অভিযুক্তদের বেশ কয়েকবার কালীগঞ্জ থানায় ডাকা হলেও কাজের কাজ হয়নি। তাই মঙ্গলবার প্রতারিতরা পুলিস সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
পলাশীপাড়ার যুবক তমাস শেখ বলেন, আমি মায়ের জমি বিক্রি করে ও লোন নিয়ে ছ’লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। আমাকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে কাজ দেবে বলেছিল। আমি ওখানে আট মাস ল্যাবে কাজ করেছিলাম। তারপর আমাকে বারাসত হাসপাতালে পাঠায়। আমাদের মাইনে বা কাজ সেই রকম করতে দিত না। পরবর্তীকালে বুঝতে পারি আমাকে ঠকানো হয়েছে। আমার ভাগ্নে সাত লক্ষ টাকা দিয়ে জেএনএম ল্যাবে কাজ করেছিল। কিন্তু, পরে বুঝতে পারি ওরও চাকরি হয়নি।
অভিযোগকারী রমজান শেখ বলেন, ইমরান ও শারুক আমার জামাইবাবুর বন্ধু ছিল। সেই সূত্রেই ওদের সঙ্গে পরিচয়। ওরা বলে টাকা দিলে চাকরি হয়ে যাবে। অমিতাভ দেবনাথ ও ইমরানকে দু’লক্ষ করে চার লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। তারপর ওরা বলে শারুক আনসারির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। আমাদের কল্যাণী জেএনএমে জয়েনিং লেটার দিয়েছিল। কিন্তু সেটা ভুয়ো ছিল। এখন টাকা ফেরত চাইলে ওরা দিচ্ছে না।
অভিযুক্ত শিক্ষক অমিতাভ দেবনাথ বলেন, অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। ওরা আমাকে কোনও টাকা দেয়নি। শারুক আনসারি টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। ওই যুবক আমাদের বনগাঁ থেকেও প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা নিয়ে গিয়েছে। আমিও থানায় অভিযোগ করেছি ওর বিরুদ্ধে। আমি যখন কালীগঞ্জের স্কুলে পড়াতাম তখন আমার নাম ভাঙিয়ে ও টাকা তুলেছিল। শারুক আনসারিকে ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত ইমরান বলেন, এব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। শারুক বহুদিন বাড়ি ছাড়া। ওর ব্যাপারেও আমার কিছু জানা নেই।