নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ ও সংবাদদাতা চাঁচল: ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরে ট্রেন দুর্ঘটনায় গুরুতর জখমদের মধ্যে মালদহ জেলার ছয় বাসিন্দা আছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই ইংলিশবাজার থানা এলাকার। অন্যজন জেলার চাঁচলের বাসিন্দা। ছ’জন জখমের মধ্যে চার জন পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, জখমরা প্রত্যেকেই ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুর রেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার ভোরে ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাওড়া মুম্বাই সিএসএমটি এক্সপ্রেস। দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একাধিকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। জখম কমপক্ষে ২০। জখমদের মধ্যে মালদহ জেলারই রয়েছেন ছ’জন।
হাওড়া থেকে মুম্বইগামী সিএসএমটি এক্সপ্রেসে ইংলিশবাজারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী বাদল কুমার দাস ও তাঁর স্ত্রী সহ একই এলাকার আরও তিন জন যাত্রী ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তাঁরা তিন জনই ইংলিশবাজার থানার নরহাট্টা অঞ্চলের লক্ষ্মীঘাট এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের নাম জামশেদ আলি, সোহরাব আলি এবং কাদের শেখ।
জামশেদ আলির মা মৌসুমি বিবি বলেন, সোমবার সকাল ৭টায় আমার ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। ওইদিন রাতেই আবার হাওড়া থেকে মুম্বইয়ের ট্রেনে ওঠে। রাতে ট্রেন ছাড়ার পরে ছেলে তার স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল। ভোর পৌনে ৪টায় আমার মেজ ছেলের কাছে ফোন আসে। তার কাছ থেকেই ট্রেন দুর্ঘটনার খবর জানতে পারি। খবর পেয়েই আমরা কান্নাকাটি শুরু করে দিই। আমার ছেলের সঙ্গে এখানকার আরও দু’জন রয়েছে। ছেলের মাথায় ও ঘাড়ে গুরুতর চোট লেগেছে। তাদের তিন জনকেই উদ্ধার করে রেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের চিকিৎসা করে ওষুধ দেওয়া হয়। ছেলে আমার সঙ্গে ভিডিওকল করেও কথা বলেছে। ছেলের সঙ্গে কথা হলেও আমরা অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে আছি।
এদিকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে বাদল কুমার দাস বলেন, তাঁর দুই পায়ে ও হাতে চোট লেগেছে। বাদলবাবুর ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীর মাথায় ও কোমরে চোট লেগেছে।
অন্যদিকে, এই ট্রেন দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন চাঁচল-১ ব্লকের দেবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ওই ব্যাক্তির নাম রাজু শেখ। স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে জখম ব্যক্তির পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান। তিনি সংসারের একমাত্র রোজগেরে। জখমের স্ত্রী ছবি খাতুন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামী মুম্বইয়ে একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করেন। চক্রধরপুরে রেল দুর্ঘটনায় আমার স্বামীর কোমরে চোট পেয়েছেন। তিনি বর্তমানে সেখানে রেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরিবারের কয়েকজন সদস্য ইতিমধ্যেই সেখানে রওনা দিয়েছেন।
রাজু শেখের পরিবার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, তিনি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত একটি কামরার সাইড আপার সিটে ছিলেন। দুর্ঘটনার অভিঘাতে তিনি সেই সাইড আপার সিট ভেঙে নীচে পড়ে যান। এতে তিনি কোমরে মারাত্মক চোট পেয়েছেন। (ইংলিশবাজারের লক্ষ্মীঘাট গ্রামে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন রেল দুর্ঘটনায় এক আহতের পরিবার। - নিজস্ব চিত্র।)