ভুটানের উপর নির্ভর নয়, জলপাইগুড়িতে লাল আলুর বীজ উৎপাদনে সফল রাজ্য
বর্তমান | ৩১ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: সাদা খোসার আলু নয়। উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে বরাবর প্রিয় লাল খোসার আলু। এজন্য উত্তরের বাজারে সারা বছর লাল আলুর দামই বেশি। কিন্তু, এই আলুর জন্য এতদিন ভুটানের উপরেই অপেক্ষা করে থাকতে হতো। এতদিনে সেই অপেক্ষা শেষ হতে চলেছে। জলপাইগুড়িতে কুফরি রেড স্কিন (৭০০৮) প্রজাতির বীজ উৎপাদনে সাফল্য পেল রাজ্য। গত কয়েক বছর ধরে চাষ চলছিল পরীক্ষামূলকভাবে। এবার জলপাইগুড়ি জেলায় তিনশো টনেরও বেশি আলুর বীজ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড়শো টন লাল আলু। পুজোর পরই বঙ্গশ্রী ব্র্যান্ডে ওই আলুর বীজ তুলে দেওয়া হবে চাষিদের হাতে। শুধু তাই নয়, কালিম্পংয়ে ওয়ার্ট রোগ ধরা পড়ার পর থেকে পাহাড়ে আলুর বীজ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। মাটিবাহিত এই রোগটি আলুর সর্বনাশ ঘটাতে একাই একশো। রোগের জীবাণু দীর্ঘদিন ধরে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যেতে পারে মাটির মধ্যে। ফলে এখনও পাহাড়ে আলুর বীজ উৎপাদনে কেন্দ্রের তরফে এখনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। যদিও হাইটেক প্রযুক্তির সাহায্যে মাটির সঙ্গে কোনও সংযোগ ছাড়াই পাহাড়ে আলুর বীজ উৎপাদনে ইতিমধ্যেই সাফল্য পেয়েছে রাজ্য। জলপাইগুড়ি সদরের সহকারী কৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু) মেহেফুজ আলম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগিতায় আমরা জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন জায়গায় আলুর অন্তত ১০টি জাতের বীজ উৎপাদন করছি। অনেকগুলিই নতুন।
জলপাইগুড়িতে খুব ভালো হচ্ছে। এরমধ্যে কুফরি ৭০০৮ এবং কুফরি ৭০১৫ লাল খোসার জাত দু’টি দারুণ হয়েছে। উত্তরবঙ্গে এই আলুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পুজোর পর থেকেই আমরা চাষিদের হাতে বীজ তুলে দিতে পারব।’ গাছ লাগানোর পর মাত্র ৬৫ দিনেই এই আলু বাজারজাত করতে পারবেন চাষিরা। হেক্টরে ফলন পাওয়া যাবে ৩৫ টন। জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে খবর, পাহাড়ে ওয়ার্ট রোগ হানা দেওয়ার আশঙ্কায় পলিথিন শিটের উপর মাটির পরিবর্তে কোকোপিট (নারকেলের ছোবড়া) ও জৈবসার দিয়ে আলুর বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। সঙ্গে যোগ করা হয়েছে জীবাণুসার। অন্যদিকে, জলপাইগুড়িতে পোকার হানা রুখতে মশারি টাঙিয়ে আলুর বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। ফার্মার্স ক্লাব ও ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানিকে নিয়ে আলুর বীজ উৎপাদনের কাজ চালানো হয়। গজলডোবা, জলপাইগুড়ি সদরের মালকানি, ময়নাগুড়ির সাপ্টিবাড়ি ও শিলিগুড়ির খড়িবাড়িতে চাষ করা হয়েছিল। প্রতিটি জায়গাতেই সাফল্য এসেছে। সহ কৃষি অধিকর্তা মেহেফুজ আলম জানিয়েছেন, ‘আমরা বীজআলুর পরিবর্তে টিস্যু কালচার চারা লাগিয়েও যাতে আলুর বীজ উৎপাদন করতে পারি, সেই চেষ্টাও করছি। এতে চাষির খরচ যেমন কম হবে, তেমনই রোগপোকার আক্রমণও কমবে অনেকটাই।’