সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: সামশেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙনের জেরে স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার কমল। গত সোমবার সকাল থেকে আচমকাই সামশেরগঞ্জের নতুন শিবপুরে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে দশটির বেশি পাকা বাড়ি নদীতে তলিয়ে যায়। গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী লোহরপুরেও কয়েক মিটার এলাকা নদীতে তলিয়ে যায়। ভাঙনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তেই স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা অর্ধেকে এসে নেমেছে। অনেক পড়ুয়ার বইখাতাও নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে স্কুলে না গিয়ে ঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যেতে ব্যস্ত তারা। যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসছেও, তারাও আতঙ্কিত। শিক্ষকরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে স্কুল চালাচ্ছেন। পাশাপাশি পড়ুয়াদেরও সচেতন থাকার কথা বলছেন।
সামশেরগঞ্জ চক্রের স্কুল পরিদর্শক হোসনেয়ারা খাতুন বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় চলছে, স্কুলে উপস্থিতির হারও কমেছে। নদী স্কুলের দোরগোড়ায় চলে এসেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে তো কিছু বলার নেই। তবুও বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
বিডিও সুজিতচন্দ্র লোধ বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভাঙনের খবর নেই। তবে যে আবারও ভাঙন শুরু হবে না তা বলা যাচ্ছে না। বর্ষার শুরুতে যদি এমনটা হয় তাহলে জল নামতে শুরু করলে কী হবে, সেটা নিয়ে আশঙ্কা রয়েই যায়।
গত সোমবার সকালে সামশেরগঞ্জের নতুন শিবপুরে আচমকাই ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন এলাকা থেকে ১০০ মিটারেরও কম দূরত্বে রয়েছে ৯৩ নম্বর নতুন শিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙনের আতঙ্কে প্রথমদিন স্কুলমুখো হয়নি পড়ুয়ারা। যদিও বুধবার প্রায় শ’ খানেক ছাত্রছাত্রী স্কুলে এসেছে। আরও প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রছাত্রী অনুপস্থিত। অনুপস্থিতদের অধিকাংশই ভাঙন এলাকার ছেলেমেয়ে বলে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে। স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সুমন্ত মণ্ডল ও সুবর্ণ মণ্ডল বলে, আমাদের বইখাতা নদীতে চলে গিয়েছে। স্কুলের পোশাক, জামাকাপড় কিছুই নেই। তাই স্কুলে যাইনি। স্কুলের সহকারী শিক্ষক ওয়াকিল আহমেদ বলেন, ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি আমরাও আতঙ্কে রয়েছি। আমি ভাঙন কবলিত এলাকার ছেলেমেয়ে সঙ্গে গিয়ে কথা বলেছি। অনেকেরই বইপত্তর নদীতে চলে গিয়েছে। বাকি ছেলেমেয়েরা অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছে।
নদী থেকে প্রায় ৪০ মিটার দূরে রয়েছে লোহরপুর ৮৫ নম্বর উত্তরচাচন্ড প্রাইমারি স্কুল। ভাঙনের আতঙ্কে সেই স্কুলে উপস্থিতিও কমেছে। এদিন প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রায় পৌনে তিনশো ছেলেমেয়ে স্কুলে আসে। স্কুলের পাশে নদী চলে আসায় আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষকরাও। স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক মহম্মদ সেলিম বলেন, সবসময় সতর্ক থাকতে হচ্ছে। কখন যে আবার ভাঙতে শুরু করে। পাশেই নদীবাঁধ লাগোয়া চাচন্ড শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র। সেই শিক্ষাকেন্দ্র দু’টিতেও উপস্থিতির হার কমেছে বলে জানা গিয়েছে।