নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: বনস্পতি দিয়ে ভেজাল ঘি বানানোর চল অতীত। এখন ভেজাল ঘি বানাতে নয়া পদ্ধতি নিয়েছে কারবারিরা। শুনতে অবাক লাগলেও ঘি তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে লটকন বা নটকো ফল। খরচ পড়ছে অতি অল্প। বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে অত্যন্ত বেশি দামে। মুনাফা হচ্ছে দ্বিগুনেরও বেশি। সম্প্রতি এইরকম এক অসাধু চক্রের হদিশ মিলল কৃষ্ণনগরের ভালুকা এলাকায়। সেখানে অভিযান চালিয়ে ১০০ কেজি ভেজাল ঘি বাজেয়াপ্ত করেছে ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। উদ্ধার করা হয়েছে ড্রাম ভর্তি নটকো ফল। যদিও ভেজাল ঘি তৈরির সঙ্গে যুক্ত অসাধু ব্যবসায়ীকে ধরতে পারেনি পুলিস। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি পালিয়ে যায়। তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, ডিইবি’র তরফে অভিযান চালানো হয়েছিল। ভেজাল ঘি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। অবৈধ কারবার বন্ধ করতে পুলিস প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত ভালুকা পঞ্চায়েতের সন্তোষপুর এলাকায় অভিযান চালায়। সেখানে এক অসাধু ব্যবসায়ীর বাড়ির ছাদে ভেজাল ঘি তৈরি করা হচ্ছিল। রীতিমতো কুটির শিল্প বানিয়ে কারবার চলছিল বেশ কয়েকদিন ধরে। পুলিশ সেখানে গিয়ে রীতিমতো অবাক হয়ে যায়। কারণ, ছাদে বড় রান্না ঘর বানিয়ে ড্রাম ভর্তি করে ভেজাল ঘি বানানো হচ্ছিল। সেখান থেকে একটা বড়ো কড়াইও পাওয়া গিয়েছে। ভেজাল ঘি বানিয়ে তারপর নিজেরাই বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করত। ড্রামে ভর্তি করে তা বিভিন্ন দোকানে নিয়ে যাওয়া হতো। অথচ, বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই সেই ঘি ভেজাল। পুলিস আসার আগাম খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে থেকে পালিয়ে যায় ওই কারবারি।
পুলিসের অনুমান, প্রকৃত ঘি’র যা দাম তার থেকে অনেক কম দামে এই ঘি বিক্রি করা হয়। স্বাদেও বিশেষ পার্থক্য নেই। যার ফলে বিভিন্ন দোকানে প্রকৃত ঘি বিক্রি করলে লাভের অঙ্ক অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু এই ভেজাল ঘি বিক্রি করলে লাভের অঙ্ক বেড়ে যায় খুচরো ব্যবসায়ীদের। আর সেই সুযোগেই এই ভেজাল ঘি বানিয়ে বাজারে ছড়াচ্ছে অসাধু কারবারিরা।
জানা গিয়েছে, ভালো মানের এক কেজি ঘিয়ের দাম প্রায় দেড় হাজার টাকা। আর এই ভেজাল ঘি কেজিপ্রতি ৭৫০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব ভেজাল ঘি পাইকারি দরে খুচরা বিক্রেতারা ৪০০-৫০০ টাকায় কেনেন। শান্তিপুর এই ভেজাল ঘি তৈরির জন্য বিখ্যাত। অতীতে শান্তিপুর এলাকা থেকে একাধিকবার ভেজাল ঘি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিন্তু সেগুলিতে ডালডা-বনস্পতি মেশানো হয়। সাধারণত ৯০০ গ্রাম ভেজাল ঘি তৈরিতে ৬০০ গ্রাম পাম ওয়েল, ২০০ গ্রাম ডালডা ও ১০০ গ্রাম খাঁটি ঘি মেশানো হয়। কিন্তু এবার তাতে নটকো ফল মেশানো হচ্ছে ভেজাল ঘি বানাতে। বাজেয়াপ্ত হওয়া ভেজাল ঘি। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র