নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ে ফার্স্ট সেমেস্টারে অর্থনীতিতে ভর্তি হয়েছেন মাত্র একজন! পদার্থবিদ্যায় সংখ্যাটা ছয়। অঙ্কে ১২০টি আসনে ভর্তি মাত্র ২২জন। আফশোসের বিষয়, ১৭টি অনার্স বিষয়ে একটিরও সব আসন পূরণ হয়নি। অনার্স ও জেনারেল মিলিয়ে তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ২৪০০টি। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হতে দেখা যায়, মাত্র ৮০৩জন ভর্তি হয়েছেন। অধ্যাপকদের মধ্যে শুধুই হতাশার ছবি। কলেজের ইতিহাসে এত কম সংখ্যক ছাত্রছাত্রী কোনওদিন ভর্তি হয়নি। ভর্তির এই বেহাল দশা কলেজ কর্তৃপক্ষকে উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে। কারণ, ২০১৬ সালের পর আগামী এক-দু’মাসের মধ্যে কলেজে ন্যাক টিমের ভিজিট হবে। ‘এ’ গ্রেড ধরে রাখা নিয়ে কলেজের অধ্যাপকদের গলায় হতাশার সুর।
তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বলেন, আমাদের কলেজে পঠনপাঠন বেশ ভালো। গত পাঁচ বছরে পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয়ে টপার হয়েছেন। তারপরও ছাত্রছাত্রী সংখ্যা অপ্রতুল। আমাদের খুব খারাপ লাগছে। জানি না, এর পরিবর্তন কীভাবে হবে!
সরকারি চাকরিতে বেহাল দশা। ২০১৬ সালের পর এরাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে কর্মসংস্থানের বেহাল দশার জন্য জেনারেল লাইনে ছাত্রছাত্রীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয় একসময় অবিভক্ত মেদিনীপুরের নামী কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। সেই কলেজে ছাত্রের আকাল দেখে অধ্যাপকরাই হা হুতাশ করছেন। ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কলেজে ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশন চলছে। আগামী ৭আগস্ট থেকে সদ্য ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু, ভর্তির যা অবস্থা তাতে ফাঁকা ক্লাসরুমে ক্লাস করতে হবে অধ্যাপকদের। এটা শুধুমাত্র তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয় নয়, গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কমবেশি সব কলেজের একই ছবি।
তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ে অঙ্ক অনার্সে মোট আসন ১২০টি। সেখানে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ২২জন। ইংরেজিতে অনার্সে মোট ১৩৮টি আসন। ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৭৫জন। ইতিহাসে ১০০আসনে ২৩জন ছাত্রছাত্রী। একইভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ২১জন, দর্শনে ২১জন, অ্যাকাউনটেন্সিতে ২৭জন, বটানিতে ২৪জন, কেমিস্ট্রিতে ৩১জন, কম্পিউটার সায়েন্সে ১০জন, ভূগোলে ১৭জন ভর্তি হয়েছেন। সাধারণত, ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রায় ২০শতাংশ ড্রপ আউট হন। বিগত বছরগুলিতে এই কলেজে ১৬০০-১৭০০জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১২০০জন পরীক্ষা দিতেন। এবার সেই সংখ্যাটা এক ধাক্কায় কমে ৮০৩-এ নেমে গিয়েছে। অর্থাৎ মোট আসনের এক-তৃতীয়াংশ সিট পূরণ হয়েছে।
২০১৯সাল থেকে এই কলেজে পাঁচ ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের টপার হয়েছেন। কলেজে পঠনপাঠন থেকে সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। অধ্যাপকদের একাংশের ইচ্ছামতো কলেজছাড়ার ঘটনায় রাশ টানা হয়েছে। কিন্তু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসল সম্পদ ছাত্রছাত্রীদের বড়ই আকাল। আর এটাই চিন্তা বাড়িয়েছে কলেজের। ২০১৬সালে শেষবার এই কলেজে ন্যাক ভিজিট হয়েছিল। সেবার এ গ্রেড পেয়েছিল। আট বছরের ব্যবধানে ফের কলেজে ন্যাক টিমের আসার কাউন্টডাউন চলছে। এবার কলেজে ছাত্রছাত্রীর মোট সংখ্যা এবং সংরক্ষিত আসনে ভর্তি, উভয় ক্যাটাগরিতে ন্যাকের অ্যাসেসমেন্টে ডাহা ফেল করার আশঙ্কা চেপে বসেছে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ব্রহ্মময় নন্দ বলেন, তমলুক কলেজের অতীতের সুনাম রয়েছে। এখানে নামী অধ্যাপক অধ্যাপিকারা আছেন। তারপরও ছাত্রভর্তির এই শোচনীয় অবস্থা চিন্তার বিষয়। আজকের শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের জীবিকামুখী করছে না। চাকরির অবস্থা খুব খারাপ। স্কুলে শিক্ষক অপ্রতুল। তারপরও নিয়োগ বন্ধ। রাজনৈতিক ডামাডোল পরিস্থিতিও এরজন্য অনেকটা দায়ী। রাধামণির বাসিন্দা তথা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ এক ছাত্রের অভিভাবক শ্রীকান্ত ঘোষ বলেন, কাজের বাজার খুব খারাপ। পড়াশোনা করে ছেলেমেয়েরা বাড়িতে বসে আছে। সেসব দেখে যুব সম্প্রদায় দিশাহীন হয়ে পড়ছে। তাই উচ্চ শিক্ষায় তারা আগ্রহ হারাচ্ছে।
তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি পক্রিয়া চলছে।-নিজস্ব চিত্র