প্রেমিকদের ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় সুজানগর প্রদ্যোৎ শিশু উদ্যান সিল
বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৪
সংবাদদাতা, ঘাটাল: পার্কে প্রেমিকাদের সঙ্গে ঘুরতে আসা যুবকদের ভয় দেখিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ উঠছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দাসপুর গঞ্জ লাগোয়া সুজানগর প্রদ্যোৎ শিশু উদ্যান সিল করে দেওয়া হল। ফলে বুধবার থেকে ওই পার্কে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। এই পার্কটি দাসপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিও দীপঙ্কর বিশ্বাস, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার পাত্র গিয়ে পার্কটি অনির্দিষ্ট কালের জন্য সিল করে দেন। যদিও টাকা তোলার অভিযোগে পার্ক সিল করা হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। বিডিও বলেন, আসলে পার্কটি লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই জন্যই পার্কটি সিল করে দেওয়া হল। আবার নতুন করে লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। লিজে যাঁরা পার্কটি পরিচালনা ও দেখভাল করার দায়িত্ব পাবেন তাঁরাই পার্কটি ফের খুলবেন।
দাসপুর গঞ্জ থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে শিলাবতী নদীবাঁধের কোলে পার্কটি রয়েছে। প্রত্যেক দিনই পার্কে ব্যাপক ভিড় হয়। পার্কে শিশুদের খেলার সামগ্রী যেমন রয়েছে, তেমনই বড়দের সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বসার জায়গা। পার্কের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া শিলাবতী নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তাই ‘কাছের মানুষকে’ নিয়ে প্রত্যেক দিনই অনেকেই পার্কে সময় কাটাতে যান।
যারা পার্কের লিজ নিয়েছিল, তারা অনেক সময় গাজোয়ারি ব্যবহার করে বলে অভিযোগ। প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে কোনও যুবক ঘুরতে এলে তাঁদের কাছাকাছি বসার, হাত ধরে পার্কে ঘোরার ভিডিও তুলে ব্লাকমেলও করা হয় বলে অভিযোগ। দাসপুর গঞ্জের এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের এলাকায় প্রচুর স্বর্ণশিল্পী রয়েছেন। তাঁরা ভিনরাজ্যে থাকেন। বাড়ি এলে প্রেমিকাকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে যান। পার্কের কেয়ারটেকররা যদি দেখতে পান, কোনও প্রেমিকের গলায় সোনার চেন, হাতে দু’তিনটে আংটি রয়েছে, তাঁদেরই টার্গেট বানানো হয়। ভিডিও তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালের হুমকি দিয়ে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়। যেহেতু লুকিয়ে প্রেম। ভিডিও ভাইরাল হলে বিশেষ করে প্রেমিকার মান সম্মান নষ্ট হবে। সেই জন্য তাঁরা বাধ্য হয়েই দাবি মতো টাকা দিয়ে দিতেন। অনেক টাকা না দিতে পেরে আংটি বা সোনার চেন খুলে দিয়ে সসম্মানে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। লোকলজ্জার জন্য থানায় বা পঞ্চায়েত সমিতিতে অভিযোগ জানাতেন না। সোমবারও একইভাবে দু’জনের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ৮০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত থানা পর্যন্ত গড়ায়। পুলিস পার্কের দুই কেয়ারটেকরকে আটক করে। বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতি জানতে পারলে চরম অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তারপরই ‘লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে’ অজুহাত দিয়ে পার্ক সিল করে দেওয়া হয়। দাসপুর গঞ্জের বাসিন্দারা বলেন, লিজ তো এপ্রিল মাসে শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও তিন মাস রমরমিয়ে পার্ক চলেছে। ওইদিনের ঘটনার পর প্রশাসনের হয়তো শীতঘুম ভেঙেছে। দাসপুরে প্রদ্যুৎ শিশু উদ্যান সিল করে দেয়া হচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র