সংবাদদাতা, রামপুরহাট: নিজেদের স্কুলেই রীতিমতো তাণ্ডব চালাল একদল ছাত্রী। লাথি মেরে বাথরুমের দরজা থেকে টাইলস ভাঙচুরের পর উল্লাস। এমনকী ভাঙচুর শেষে চলল দেদার সেলফি। ১২৪ বছরের পুরনো শিক্ষাঙ্গন রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে এমনই বেনজির ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। এই ঘটনা সভ্যতার সীমা লঙ্ঘন করেছে বলেও দাবি অনেকের।
রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় জেলার মধ্যে অন্যতম নামী স্কুল। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নিয়মিত ভালো ফল করে আসছে তারা। স্বভাবতই এই স্কুলে মেয়েদের ভর্তি করার জন্য হামলে পড়েন অভিভাবকরা। কিন্তু এই স্কুলের একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে রীতিমতো চমকে উঠছেন অভিভাবকদের একাংশ। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্কুল ড্রেস পরা চার-পাঁচজন ছাত্রী স্কুলের ঝাঁ চকচকে একটি বাথরুমের দরজা ভাঙছে। রীতিমতো তারা হাসছে, উল্লাস করছে। বাথরুমের একের পর এক টাইলস লাথি মেরে ভেঙে দিচ্ছে। ৩৮ সেকেন্ডের সেই ভিডিও রীতিমতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। স্কুলেরই এক ছাত্রী তাণ্ডবের সেই ভিডিও মোবাইল বন্দি করে। যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাস চলার পাশাপাশি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য নবম শ্রেণির ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন চলছে। ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা সকলেই নবম শ্রেণির ছাত্রী। কিন্তু কী এমন ক্ষোভ থেকে নিজেদের শিক্ষাঙ্গনের ক্ষতি করছে ওই ছাত্রীরা? স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছে, স্কুলে ক্লাস চলাকালীন মোবাইল ব্যবহার করতে দেখলে তা কেড়ে নেন প্রধান শিক্ষিকা। পরে ছাত্রীদের অভিভাবক ডেকে তাঁদের হাতে মোবাইল তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সতর্ক করা হয়। এনিয়ে প্রধান শিক্ষিকার পাশে অভিভাবকরা থাকলেও ছাত্রীদের একাংশ অসন্তুষ্ট। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ এই ভাইরাল ভিডিও।
জানা গিয়েছে, এই স্কুলে ন’টি বাথরুম রয়েছে। সবকটি ঝাঁ চকচকে। প্রায়ই বাথরুমের কল ভেঙে দেওয়া হচ্ছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ ভাবছিল, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় অন্য স্কুলের পড়ুয়ারা হয়তো করেছে। এছাড়া বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাও হয় স্কুলে। তাদের কাজ হতে পারে বলে অনুমান করা হয়। কিন্তু এই ভিডিও দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত, কিছু ক্ষেত্রে এই স্কুলের ছাত্রীদের একাংশ সেগুলি ভেঙে দিচ্ছে। স্কুলের কড়া শাসন এড়াতে কোনও কোনও ছাত্রী ক্লাস না করেই বেরিয়ে যাচ্ছে। পরে টাউন হলের সামনের বাথরুমে স্কুলের পোশাক পরিবর্তন করে অন্যত্র সময় কাটাচ্ছে। আবার স্কুল চলাকালীন এসডিএসের স্টেডিয়ামে আড্ডা মারছে এই স্কুলের ছাত্রীরা। সেই ছবিও ভাইরাল হয়েছে।
দিনকয়েক আগেই এমনই এক তাণ্ডবের আগে স্কুল চত্বরে থাকা সিসি ক্যামেরায় আঠা দিয়ে কাগজ লাগিয়ে দেয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ সেটা দেখতে পেয়ে পাঁচ ছাত্রীর অভিভাবককে ডেকে সর্তক করার পাশাপাশি ওই ছাত্রীরা ক্ষমা চেয়ে নেয়। আবার এমনও ঘটছে যে মোবাইল সহ ছাত্রীকে ধরে অভিভাবকদের ডাকা হচ্ছে। অনেকে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মেয়ে যে মোবাইল ব্যবহার করছে তা অভিভাবকরা জানেনই না।
স্বভাবতই ছাত্রীদের একাংশকে নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন প্রধান শিক্ষিকা মল্লিকা হালদার। তিনি বলেন, ভাঙচুরের ভিডিও দেখে অভিযুক্ত ছাত্রীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলে দ্বিতীয় ইউনিট টেস্ট শুরু হচ্ছে। তাই পরীক্ষা শেষ হলেই ওই ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিজস্ব চিত্র