• সেই রাঙাপানিতে বেলাইন মালগাড়ি, রেলমন্ত্রী নির্লিপ্তই
    বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও নয়াদিল্লি: ফের শিরোনামে রাঙাপানি। ফের বেলাইন রেল। আর সেটাও কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার দেড়মাসের মধ্যেই। মুম্বই মেলে দুর্ঘটনার আতঙ্কের রেশ কাটার আগেই বুধবার উত্তরবঙ্গে লাইনচ্যুত হল মালগাড়ির দু’টি ট্যাঙ্কার। একই এলাকায় পরপর দু’বার ট্রেন দুর্ঘটনায় রেলের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে বিস্তর প্রশ্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিয়ম মাফিক তদন্ত শুরু করেছে রেল। আর অদ্ভুতভাবে, এতকিছুর পরও নির্লিপ্ত রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। কার্যত প্রতিদিন প্রশ্নের মুখে পড়ার পরও দুর্ঘটনা এবং যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে নীরব তিনি। রেলমন্ত্রী বরং মেতে আছেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, বুলেট ট্রেন নিয়ে। আর সাধারণ মেল-এক্সপ্রেসে যাত্রীদের রেলে চাপতে হচ্ছে ঈশ্বরের ভরসায়। 


    গত ১৭ জুন ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। আর বুধবার মালগাড়ি। বেলা পৌনে ১২টায় এই দুর্ঘটনার পর মানুষের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। যদিও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে’র সাফাই, ‘রাঙাপানিতে প্রাইভেট সাইডিংয়ের ভিতরে পণ্যবাহী ট্রেনের দু’টি ওয়াগান লাইনচ্যুত হয়। সেটি ব্যক্তিগত সাইডিং। এতে প্রধান লাইনে ট্রাফিক প্রভাবিত হয়নি।’ উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহারের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার বলেন, ‘ওই ঘটনার জেরে দিল্লিগামী রাজধানী এক্সপ্রেস সামান্য দেরিতে চলছে। আরএকটি ট্রেনের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।’ অর্থাৎ, হতাহত নেই বলেই স্বস্তিতে রেল! হাঁপ ছাড়ছেন আধিকারিকরাও। আর রেলমন্ত্রী জয়গান গাইছেন নরেন্দ্র মোদির। লোকসভায় লিখিত জবাবেও জানিয়েছেন, নিয়মিতভাবে এই দুই ট্রেনের অগ্রগতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা কে খতিয়ে দেখছে? চুপ রেলমন্ত্রক। তবে সার্বিকভাবে ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে লোকসভায় এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে এদিন রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, কংগ্রেস আমলের তুলনায় মোদি জমানায় দুর্ঘটনার সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে কমে গিয়েছে।


    তবে বিজেপির অন্দরের খবর, পরের পর ট্রেন দুর্ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রকের কাছ থেকে রিপোর্টও চাইতে পারে পিএমও। প্রধানমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন, এবারের সরকারে বিজেপি সংখ্যালঘু। বেশিদিন এ ব্যাপারে নীরব থাকা যাবে না। এরপর চেপে ধরবে শরিকরাও। রেল বাজেটের উপর বুধবার থেকে লোকসভায় শুরু হয়েছে আলোচনা। তার জবাবি ভাষণে ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে মৌনব্রত ভাঙবেন কি বৈষ্ণব? আপাতত এ প্রশ্নেই শুরু হয়েছে তুমুল জল্পনা।


    ফাঁসিদেওয়া ব্লকের অধীন রাঙাপানি। সকাল ১১টা ৪৫মিনিট নাগাদ ৬৪টি বগি বিশিষ্ট তেলের ট্যাঙ্কার নুমালিগড় রিফাইনারি কেন্দ্রে প্রবেশ করছিল। রাঙাপানি লেভেল ক্রসিং থেকে ৫০ মিটার দূরে রেল লাইনে কিছুটা বাঁক রয়েছে। ট্যাঙ্কারটি লেভেল ক্রসিং পার করার সময় বিকট আওয়াজ হয়। ট্যাঙ্কারের মাঝখানের দু’টি ওয়াগান লাইন থেকে সরে যায়। বুঝতে পেরেই সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন থমিয়ে দেন চালক। বন্ধ হয়ে যায় রেলগেট ও মেইন লাইন। ভিড় করেন গ্রামবাসীরা। খবর পেয়ে জিআরপি, আরপিএফ এবং রেলের পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। দীর্ঘ দু’ঘণ্টার চেষ্টার পর লাইন স্বাভাবিক করে রেল। 


    রাঙাপানি স্টেশনের পাশেই দুর্ঘটনাস্থল। এবার দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে ধন্দে পড়েছে রেল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর রেল কর্তাদের একাংশ জানান, ওই মালগাড়ির বগিগুলি খালি ছিল। বগি কিংবা চাকার কোনও সমস্যার জন্য দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। লাইনের বাঁকের জন্যও নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে বগিগুলি। তাহলে কি লাইনে গলদ নেই? এখানেও পিছু হটছে রেল। তাদের বক্তব্য, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্পষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। 
  • Link to this news (বর্তমান)