প্রীতেশ বসু, কলকাতা: বিমান জ্বালানির বিক্রয় কর নীতিতে বড়সড় বদল আনছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যা লাগু হলে বিমান জ্বালানি বা এভিয়েশন টারবাইন ফুয়েলের (এটিএফ) উপর বিক্রয় কর বসবে বাগডোগরা বিমানবন্দরে। এতদিন সেখানে বিক্রয় কর লাঘব করা ছিল। কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও রিফুয়েলিংয়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তন হবে বিক্রয় করের হার। তবে অন্ডাল বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে এটিএফ’র উপর বিক্রয় কর ছাড় আগের মতোই বলবৎ থাকছে বলেই সূত্রের খবর। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া আগস্ট মাসেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে তেল সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিমান জ্বালানির উপর বিক্রয় কর বা সেলস ট্যাক্সের কাঠামোতে কী কী বদল আসছে? সূত্রের খবর, বর্তমানে কলকাতা বিমানবন্দরে রিফুয়েলিংয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ‘বেস ইয়ার’ অনুযায়ী অনুমোদিত পরিমাণ জ্বালানি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে বিক্রয় কর দিতে হয়। তার উর্ধে জ্বালানি ক্রয় করলে বিক্রয় কর গিয়ে দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে। নয়া নীতিতে এই নিয়ম আর থাকছে না বলেই তেল সরবরাহ সংস্থা সূত্রে খবর। এবার থেকে সমস্ত ক্ষেত্রেই (অর্থাৎ যত পরিমাণ জ্বালানি ক্রয় করা হোক না কেন) সরাসরি ২০ শতাংশ বিক্রয় কর, এমন সিদ্ধান্তই রাজ্যের তরফে নেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, বাগডোগরা বিমানবন্দরে রিফুয়েলিংয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয় কর ধার্য হচ্ছে সাড়ে ১২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ১৭ জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কলকাতা-বাগডোগরা বিমান কম থাকার কারণে সন্ধ্যার আগে উত্তরবঙ্গ পৌঁছাতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে বিকেলে ফ্লাইট ধরতে যাওয়ার সময়েই বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়িয়েই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘আমি সকাল থেকে চেষ্টা করেও ফ্লাইট পাইনি। ফ্লাইটের এত দুর্দশা জানতাম না। দুপুর ১২.৪০’এর ফ্লাইট আগে বুক হয়ে গিয়েছে। মাঝে একটিও ফ্লাইট নেই। অথচ আমরা ফুয়েল চার্জ ফ্রি করে দিয়েছিলাম। এবার আমি এটা নিয়ে ভাবব। আমাদের এখান থেকে বিনা পয়সায় ফ্লাইটের তেল নেবে আর কলকাতার বিমানগুলো তুলে দেবে এটা হতে পারে না। জানি না, কী চলছে দেশে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার পরেই বিমান জ্বালানির উপর বিক্রয় করের বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করে রাজ্য। সেই মর্মেই নীতিতে বদল আনার তোড়জোড় শুরু করা হয়। ২০১৩ সালে প্রথম বাগডোগরা এবং অন্ডাল বিমানবন্দরে রিফুয়েলিংয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয় করে ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। মূলত বিমান চলাচলের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। যার ইতিবাচক প্রভাবও উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে পড়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। চাঙ্গা হয়েছে উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্পও। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাগডোগরার ক্ষেত্রে এই ভর্তুকি বহাল না রাখলেও, খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। সেই কারণেই রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত বলেই তাঁরা মনে করছেন। বর্তমানে, এক বছরে এটিএফ বাবদ ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা বিক্রয় কর আদায় হয় রাজ্যে। নয়া নীতি বলবৎ হলে এই বাবদ রাজস্ব আদায় অনেকটাই বাড়বে বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের।