• কোর্টে ঠাকুমার গলা জড়িয়ে নাতনির প্রশ্ন, ‘বাড়িতে বর‑বউ পুতুল ঠিক আছে তো?’
    বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ছেলের কাছ থেকে খোরপোশের টাকা পান না। ৭৭ বছরের অসহায় অঞ্জু বৈরাগী শিয়ালদহ কোর্টে এ নিয়ে আগেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন। মঙ্গলবার শুনানি ছিল। তাই কাশীপুর রোডের বাসিন্দা অঞ্জুদেবী এসেছিলেন আদালতে। তাঁর ছেলে স্বপনবাবুও এসেছিলেন স্ত্রী ও সাত বছরের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে। কোর্টে ঠাকুমার সঙ্গে দেখা হয় নাতনির। বাচ্চাটি সবার খুব আদরের। ভরা আদালতে অঞ্জুদেবীকে দেখেই সে ছুটে চলে আসে। গলা জড়িয়ে ধরে ঠাকুমার। তারপর তার জিজ্ঞাসা, ‘বাড়িতে আমার টানা রিকশ আর বর‑বউগুলো কেমন আছে গো? ঠিক আছে তো?’ লোকভর্তি কোর্ট রুমেও অঞ্জুদেবী আবেগ চাপতে পারেননি। নাতনিকে জড়িয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন। বাচ্চাটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ‘তোর সব জিনিস গুছিয়ে রাখা আছে মা।’ তারপর একসময় মামলার শুনানি শেষ হয়। তবে নাতনি কিছুতেই নামতে চায় না ঠাকুমার কোল থেকে। শেষপর্যন্ত অনেক কান্নাকাটির পর হাতে লজেন্স দিয়ে তাকে কোল থেকে নামানো হয়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ান ৭৭ বছরের বৃদ্ধা।অন্যদিকে এজলাসে বিচারকের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় স্বপনবাবুকে। খোরপোশের টাকা দেওয়া হচ্ছে না কেন? বিচারকের এই প্রশ্নের মুখে সাফাই দিয়ে বলেন, ‘স্যার কিছু সমস্যা ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই মাকে টাকা মিটিয়ে দেব। কথা দিচ্ছি আর দেরি হবে না।’ এরপর বিচারক এক মাসের মধ্যে সুদসহ বকেয়া টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। স্বপনবাবু পরে বলেন, ‘পারিবারিক বিষয়কে নিয়ে গণ্ডগোলের ফলে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।’


    আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বপনবাবু স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে কাঁকুরগাছিতে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। অঞ্জুদেবীকে দেখভাল করতেন না। ফলে খোরপোশের জন্য ছেলের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বৃদ্ধা। তাঁর অভিযোগ, খাওয়াদাওয়া, ওষুধ কিনতে অসুবিধা হচ্ছে। শুনানি শেষে আদালত বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত স্বপনবাবুকে নির্দেশ দেয়, প্রতিমাসে আট হাজার টাকা দিতে হবে মাকে। তবে নির্দেশের পর টাকা না মেলায় বৃদ্ধা ফের আদালতের দরজায় কড়া নেড়েছিলেন। মঙ্গলবার এক মাসের মধ্যে টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
  • Link to this news (বর্তমান)