ফি বছর কলকাতার ডোমপাড়ায় তৈরি বাঁকই তারকেশ্বরে নিয়ে যান শ্রীরামপুরের সমিতরা
বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ফি বছর উত্তর কলকাতার ডোমপাড়ার শিল্পীদের হাতে তৈরি বাঁকে করে জল নিয়ে তারকেশ্বরে যান শ্রীরামপুরের সমিত, শুভজিৎ, বিশ্বজিৎরা। শ্রাবণ মাসে প্রতি সপ্তাহেই তাঁরা এক সঙ্গে ওই শিবধামে যান পুণ্যলাভের আশায়। কখনও ভূতনাথ, কখনও বাগবাজার, কখনও কালীঘাট, আবার কখনও শেওড়াফুলি থেকে জল নিয়ে যান। তাঁদের কথায়, এখানে শিল্পীদের যেমনভাবে বরাত দেওয়া হয়, সেইভাবেই তাঁরা সামনে বসে বাঁশ কেটে তৈরি করে দেন বাঁক। ফলে অন্য আর পাঁচটা জায়গায় পাইকারিভাবে তৈরি থাকা বাঁকের প্রতি আমাদের কোন আগ্রহই নেই।
ডোমপাড়ার রমেশ দত্ত স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল শ্রীরামপুরের জগন্নাথ ঘাট রোডের বাসিন্দা সমিত লালের সঙ্গে। তিনি বলেন, সেই সাতসকালে শ্রীরামপুর থেকে ট্রেনে করে হাওড়া এসেছি। হাওড়া থেকে বাসে চেপে সোজা এখানে। বেশ কয়েক জায়গায় ঘোরাঘুরি করে একটি জায়গায় দরদাম করে আট ফুটের একটি বাঁকের বরাত দিয়েছি। দাম পড়েছে ৬০০ টাকা। আমাদের যেমন পছন্দ, ঠিক সেইভাবেই ওই বাঁক তৈরি করে দিয়েছেন শিল্পী। ওইখানেই দু’টি পিতলের ঢাউস কলসিতে জল ভরা ছিল। সেই জল বাঁকে নিয়েই শ্রীরামপুরের ওই যুবকরা রমেশ দত্ত স্ট্রিটের ওই মহল্লায় ঘুরে ঘুরে মহড়া দিতে থাকেন। এক সময় নিজেরাই বলে ওঠেন, বাঁকটা ভালোই তৈরি হয়েছে। এরপরই টাকা মিটিয়ে তাঁরা গাড়ি ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ডোমপাড়ার রমেশ দত্ত স্ট্রিট, অদ্বৈত মল্লিক লেনে এই বাঁশ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী বৈকুণ্ঠ মাজি, স্বপন দাস, কেষ্ট প্রামাণিক, শম্ভু পালদের কথায়, এই যুবকরা প্রতিবছরই শ্রাবণ মাসে বরাত দিয়ে ৫‑৭টি করে বাঁক কিনে নিয়ে যান। দরদাম করার থেকেও ওঁরা চান, জিনিসটা যেন ভালো হয়। শিল্পী বৈকুণ্ঠ মাজি বাঁশ কাটতে কাটতে একগাল হেসে বলেন, শ্রাবণ মাস পড়লেই ওঁদের দেখা মেলে এই ডোমপাড়ায়। অন্তত বারচারেক এই মাসে ওঁরা এখানে আসেন। ওঁরাই আমাদের অন্নদাতা। আমরা চাই ওঁরা বারবার আসুন।
এদিকে, বুধবার শ্রাবণ মাস পড়তেই ডোমপাড়াজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বাঁশ, থার্মোকল দিয়ে নানা শিবমূর্তি, ত্রিশূল, ডমরু, কলসি প্রভৃতি তৈরির কাজ। সব মিলিয়ে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে এই শিল্পীপাড়া।