নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: টিকিয়াপাড়ার পর এবার ডায়মন্ডহারবার! দিনের পর দিন ট্রেন দেরিতে ছাড়া নিয়ে এবার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার যাত্রীরা। নির্ধারিত সময় মেনে ট্রেন চালানোর দাবিতে গত সোমবার সন্ধ্যায় হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায় কয়েক ঘণ্টা রেল অবরোধ করেন যাত্রীরা। পরদিন থেকে ট্রেন সময়ে চলবে—রেল এই মর্মে মুচলেকা দেওয়ার পর ওঠে অবরোধ। সেই ঘটনার পর ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই যাত্রী বিক্ষোভের সাক্ষী থাকল শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ডায়মন্ডহারহার। অবরোধ চলে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। একই কারণে এই শাখার মগরাহাটেও এদিন রেল অবরোধ হয়। চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় অসংখ্য যাত্রীকে।
ডায়মন্ডহারবার থেকে ভোরের ট্রেন লেটে ছাড়ছে দীর্ঘদিন ধরেই। ফলে কর্মস্থলে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে। এই অভিযোগ তুলে বুধবার ভোর থেকে ডায়মন্ডহারবারে রেল অবরোধ করেন যাত্রীরা। মগরাহাটেও একই ইস্যুতে অবরোধ শুরু হয়। ফলে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার আপ লাইনে ডায়মন্ডহারবার লোকাল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ডাউন লাইনে শিয়ালদহ থেকে হোটর পর্যন্ত চালানো হয় ট্রেন। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে সময়ে ট্রেন ছাড়বে—রেলের তরফে এই আশ্বাস মেলার পরই প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বাদে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। দীর্ঘ সময় ট্রেন বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েন অসংখ্য যাত্রী। অনেকে বাসে চেপে কর্মস্থলের দিকে রওনা হতে বাধ্য হন। সেখানেও অবশ্য যথেষ্ট হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, মাসখানেকের বেশি সময় ধরে সকাল সাড়ে ৫টার শিয়ালদহ লোকাল কখনও আধঘণ্টা, কখনও এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে। রোজই গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে এই ট্রেনের যাত্রীদের। দিনের পর দিন কর্মস্থলে ঢুকতে দেরি হওয়ায় তাঁদের বেতন পর্যন্ত কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। এক নিত্যযাত্রীর কথায়, ‘আমাকে রোগী নিয়ে টানা তিন সপ্তাহ মেডিক্যাল কলেজে যেতে হচ্ছে। ভোর সাড়ে ৫টার ট্রেন ধরতে হয়। এক-একদিন এক-এক সময়ে ট্রেন ছাড়ছে।’ দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে স্টেশন মাস্টারকে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই এদিন বাধ্য হয়ে তাঁরা রেল অবরোধ শুরু করেন বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের।
এদিন সাতসকালে রেললাইনের নেমে পড়েন কয়েকশো লোক। ছুটে আসে জিআরপি ও রেল পুলিস। আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা চলে দফায় দফায়। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। শিয়ালদহ থেকে কোনও ট্রেন ডায়মন্ডহারবারে ঢুকতে পারেনি। প্ল্যাটফর্মে ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকে। অনেকে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সড়কপথে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। আচমকা সড়কপথে ভিড় বেড়ে যাওয়ায় বাসে বাদুড়ঝোলা ভিড় হয়। অবশেষে সকাল সাড়ে ১০টার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ ডায়মন্ডহারবার থেকে ছাড়ে দিনের প্রথম লোকাল।