বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরির প্রকল্প বন্ধ পূর্বস্থলীর দু’টি পঞ্চায়েতে
বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৪
সংবাদদাতা, কাটোয়া: কৃষি বিশেষজ্ঞরা জমিতে রাসায়নিক সারের বদলে জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ দেন। গ্রামে গ্রামে চাষিদের জৈব সারের উপকারিতা সম্পর্কে বোঝানো হয়। বর্জ্য পদার্থ দিয়ে জৈব সার তৈরির ইউনিট চালু করা হয়েছে জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতেই। কিন্তু পূর্বস্থলীর দু’টি পঞ্চায়েতে জৈব সার তৈরির প্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে দেড় বছর আগে। কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না পঞ্চায়েত। প্রকল্প চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পূর্বস্থলীর উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতেই এসডব্লিউএম প্রকল্পে গড়ে ওঠা জৈব সার তৈরির ইউনিট চালু করা হয়েছে। পঞ্চায়েতে তৈরি সার বিভিন্ন গ্রামের চাষিদের কাছে সাপ্লাই করা হবে এমনই লক্ষ্য ছিল। পূর্ব বর্ধমান জেলা রাজ্যের মধ্যে এই ধরনের প্রকল্প তৈরিতে প্রথম স্থান পেয়েছিল। কঠিন বর্জ্য পৃথকীকরণ করে সার তৈরি হওয়ার কথা। এসডব্লিউএম প্রকল্পে ৩১ লক্ষ টাকা করে খরচ করা হয়েছে। পূর্বস্থলী-২ ব্লকের কালেখাঁতলা-১ ও ২ পঞ্চায়েতে প্রকল্পে সার তৈরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু বাজার বা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে ডাঁই করা হচ্ছে প্রকল্প এলাকায়। কিন্তু সার তৈরি এক্কেবারেই বন্ধ। জৈব সার বিক্রি হয় না। বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করেও কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না পঞ্চায়েত। তাই আর প্রকল্প চালানো যাচ্ছে না। প্রকল্প এলাকাগুলিতে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। বিল্ডিংগুলি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
কালেখাঁতলা-২ পঞ্চায়েতের সঞ্চালক হিলটন রায় বলেন, একবার জৈব সার বিক্রি করে তিন হাজার টাকা আয় হয়েছিল। তাতে চারজন কর্মীর বেতন কীভাবে দেব। আর বাজারের দোকান আর বাড়ি বাড়ি বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে যা টাকা ওঠে তাতে কর্মীদের বেতন দেওয়া যায় না। তাই সার তৈরি করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহের কাজ চলছে। পাশাপাশি কালেখাঁতলা -১ পঞ্চায়েতের প্রধান পঙ্কজ দে বলেন, জৈব সারের চাহিদা নেই। আমরা কোথায় বিক্রি করব। লোকের কাছে বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে ঠিকমতো টাকা আসে না। তাই কর্মীদের বেতন দিতেও সমস্যা হয়। তাই সার আর তৈরি হয় না। আর বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করার জন্য একটি গাড়িই চলছে। মাজিদা পঞ্চায়েতেরও একই হাল।
জানা গিয়েছে, ধাপে ধাপে প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় এই ধরনের ইউনিট করা হয়েছে। এরজন্য ইউনিটগুলিকে ই রিকশ দেওয়া হয়েছে। ওই ই রিকশ করেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে পচনশীল ও অপনশীল বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করা হয়। এর জন্য পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা গ্রামের বাসিন্দাদের দু’টি করে পাত্র দেওয়া হয়েছে। এবার পঞ্চায়েত থেকে ই রিকশ পাঠিয়ে দুই পঞ্চায়েতই সেই বর্জ্য আলাদা ভাবে সংগ্রহ করে। তারপর এসব সংগ্রহ করে ইউনিটে নিয়ে এসে পচিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে জৈব সার তৈরি করা হবে। তাতে প্রথমত এলাকার দূষণ রোধ করা যায়। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা বন্ধ হয়। আবার জৈব সার আলু, ধান, ফল, সব্জি সহ বিভিন্ন জমিতে ব্যবহার করে উপকার পান চাষিরাই। এই ইউনিট থেকে কর্মসংস্থান ও পঞ্চায়েতের আয় দুটোই নিশ্চিত হবে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করা প্রকল্প জলে গেল পূর্বস্থলীতে। পূর্বস্থলী -২ ব্লকের কালেখাঁতলা-২ পঞ্চায়েতে জৈব সার তৈরির প্রকল্প বন্ধ রয়েছে।-নিজস্ব চিত্র