• জেলা পরিষদের জমিতে বাড়ি, দোকান, শপিংমল
    বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: নিজেদের কোথায়, কত জমি রয়েছে এতদিন তা জানতই না জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ। অবশেষে নিজস্ব জমির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে কার্যত চক্ষু চড়কগাছ তাদের। কারণ দুই-এক বিঘা নয়, এখনও পর্যন্ত যতটুকু হিসেব পাওয়া গিয়েছে, তাতে প্রায় দু’হাজার একর জমি রয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের। কিন্তু থাকলে কী হবে! সেই জমির প্রায় ৭০ শতাংশই বেদখল। কোথাও জেলা পরিষদের জমিতে দিব্যি গড়ে উঠেছে দোকান-বাজার, কোথাও বানানো হয়েছে বাড়ি কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শপিংমল। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব হল? এ নিয়েই শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। 

    অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কোনও পুরসভা এলাকায় জেলা পরিষদের নামে জমি রয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদকে কিছু না জানিয়ে সেই জমিতে বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে পুরসভা। ফলে লিজের জমি হাতবদল হয়ে নির্মাণ হয়ে গিয়েছে সেখানে। অথচ সংশ্লিষ্ট জমির কোনও ট্যাক্স পাচ্ছে না পরিষদ। ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, গয়েরকাটা, মালবাজার, মেটেলি এবং রাজগঞ্জে জেলা পরিষদের সবচেয়ে বেশি জমি দখল হয়ে আছে। ময়নাগুড়িতে ইতিমধ্যে ১১ জনকে নোটিস ধরানো হয়েছে। শুধু যে বাড়ি বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এমনটা নয়, পরিষদের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দলের পার্টি অফিসও। এমতাবস্থায় দখল হটিয়ে নিজেদের জমি উদ্ধারে নেমেছে জেলা পরিষদের বর্তমান বোর্ড। নেওয়া হচ্ছে কড়া ব্যবস্থা। 

    সভাধিপতি কৃষ্ণা রায় বর্মন বলেন, ‘দখলদারদের নোটিস দেওয়া হচ্ছে। তারা যদি নিজেরা নির্মাণ ভেঙে না ফেলেন, তাহলে জেলা পরিষদ ওই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেবে। তবে যারা পরিষদের জমি দখল করে ব্যবসা করছেন, তাদের একটা সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় আসতে হবে তাদের। সেক্ষেত্রে জমির পুরো ট্যাক্স মেটাতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে জরিমানা।’ সহকারী সভাধিপতি সীমা চৌধুরী বলেন, ‘জেলা পরিষদের প্রচুর জমি রয়েছে। কিন্তু এতদিন তার কোনও সঠিক হিসেব ছিল না। এখন ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরির কাজে নেমে সবটা সামনে আসছে। যেসব জায়গা থেকে জমি উদ্ধার করা হচ্ছে, সেগুলি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে কাজে লাগানো হবে। প্রয়োজনে ওই জমিতে মার্কেট কমপ্লেক্স বা অন্য কিছু করে আয়ের পথ খুঁজবে জেলা পরিষদ।’ 

    এদিকে, জেলা পরিষদের জমিতে যাঁরা বৈধভাবে ব্যবসা করছেন, তাঁদের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের কাজ গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। এই সময়ের মধ্যে নতুন লাইসেন্সও দেওয়া হয়নি। গতবছর কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আবেদনপত্র ও টাকা নেওয়া হলেও তাঁরা লাইসেন্স হাতে পাননি বলে অভিযোগ। এনিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। অবশেষে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ ও নতুন লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শুরু করেছে জেলা পরিষদ। সভাধিপতি বলেন, ‘এটা ঠিক দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ ও নতুন লাইসেন্স দেওয়ার কাজ হয়নি। এতে জেলা পরিষদও রাজস্ব পায়নি। কিন্তু ওই কাজ কেন হয়নি তা আগের বোর্ডগুলিই বলতে পারবে। আমরা সেই কাজ শুরু করেছি। ধূপগুড়ি ও ময়নাগুড়িতে প্রায় ১০০ জনকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। বাকিটাও দ্রুত দিয়ে দেওয়া হবে।’  জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের বৈঠক। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)