• ঘুচেছে নিজভূমে পরবাসের বেদনা, দশ বছরে উন্নয়নে মুখে হাসি ছিটমহলবাসীর
    বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৪
  • মনসুর হাবিবুল্লাহ, দিনহাটা: ব্রিটিশ শাসনকালে ১৯৩৯ সালে জন্ম মনসুর আলির। ছোটবেলায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাক্ষী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়। তবে মনসুর আলি সহ ১৬২টি ছিটমহলের জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। পোয়াতুরকুঠি চারদিকে ভারত ঘেরা বাংলাদেশি ছিটমহল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তবুও দুর্দশা ঘোচেনি মনসুর আলিদের। 

    নিজেদের নাগরিকত্বের জন্য শুরু হয় আর এক লড়াই। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই সমাপ্তি ঘটে তাঁদের কষ্টের। এবছর তার দশম বর্ষপূর্তি। বেনাগরিকের যন্ত্রণা কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার দিনটি মহাউল্লাসে পালিত হল বুধবার। মনসুর আলির বাড়ি থেকে একশো মিটার দূরে কমিউনিটি হলে এদিন পালান করা হয় ৩১ জুলাই ভারতভুক্তির দশমবর্ষ। পাকা রাস্তা ধরে গাড়িতে চেপে অতিথিরা কমিউনিটি হল পর্যন্ত আসেন। বিদ্যুতের সাহায্যে মাইকে আলোচনা চলে সাবেক ছিটমহলবাসীর লড়াইয়ের কথা। দর্শকদের জন্য বসানো হয়েছিল কুলার। সন্ধ্যায় বিদ্যুতের আলোয় জ্বলজ্বল করছে গ্রাম। মনসুর আলিদের গ্রামে এসেছে পানীয় জল। প্রাথমিক বিদ্যালয়, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। গ্রামের মানুষের অনুষ্ঠানের জন্য আগেই খোলা হয়েছিল কমিউনিটি হলটি। 

    বছর দশেক আগেও এসব কল্পনা করতে পারেননি মনসুররা। তখন কাদায় ভরা রাস্তাই তাঁদের একমাত্র চলাচলের ভরসা ছিল। বর্ষার দিনে একহাঁটু জল ভেঙে চলাচল করতে হতো গ্রামে। বিদ্যুৎ, পানীয় জল কিছুই ছিল না। এখন নাগরিকত্ব পাওয়ার পাশাপাশি নাগরিক পরিষেবাও পাচ্ছেন তাঁরা। ৩১ জুলাই দশম বর্ষপূর্তিতে অশ্রুসিক্ত চোখে এসবই স্মরণ করলেন মনসুর। 

    বৃদ্ধ মানসুর আলি বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত স্বাধীন হয়েছিল, আর আমরা তখন নাগরিকত্ব হারালাম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশও স্বাধীন হল। তখনও আমরা বেনাগরিকত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়নি। গ্রামের বাইরে যাওয়ার সময় বাবা আমাকে সাবধানে যেতে বলতেন। ভারতের গ্রামে ঢুকে পড়লে পুলিস দেখলে বাংলাদেশি হিসেবে গ্রেপ্তার করত আমাদের। ভারতের নাগরিক না হওয়ার কারণে বাবার চিকিৎসা করাতে পারেনি। বৃদ্ধ বয়সে আমার চিকিৎসা হচ্ছে এখন। এই গরমে ফ্যানের তলায় থাকছি। কেউ আমাদের আর ছিটের নাগরিক বলতে পারেন না।’ 

    মনসুর এক নিঃশ্বাসে বলে যান, ‘২০১৫ সালের ৩১ জুলাই আমাদের লড়াই সফল হল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। আমরা এখন ভারতীয় নাগরিক। নিজের খেয়ালখুশি মতো ভারতবর্ষে ঘুরতে পারি। গ্রামের রাস্তা পাকা হয়েছে, বিদ্যুৎ এসেছে, কমিউনিটি হল তৈরি হয়েছে। বছর দশেক আগে এসবের কিছুই ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই আমাদের এলাকার এত উন্নয়ন করার জন্য। এভাবেই যেন তিনি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও পাশে থাকেন।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)