অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে বদলে গেল বেঙ্গল সাফারি পার্কের সিংহের নাম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া নতুন নামেই নামকরণ করা হলো তাদের। আকবর ও সীতা বদলে হল সুরজ ও তনয়া। রাজ্যে বনদপ্তরের অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়জিৎ চৌধুরী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নামেই নাম রাখা হয়েছে সিংহ জুটির।”
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরার বিশালগড়ে অবস্থিত সিপাহিজলা জুওলজিক্যাল পার্ক থেকে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে নিয়ে আসা হয়েছিল সিংহ দম্পতি আকবর ও সীতাকে। সঙ্গে একজোড়া লেপার্ড ক্যাট ও চশমা বাঁদর বা ম্যাজেস্টিক লাঙ্গুর আনা হয়। পরিবর্তে বেঙ্গল সাফারি পার্ক থেকে পাঠানো হয় একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। জু অথরিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে ত্রিপুরার সিপাহিজালা চিড়িয়াখানাতেই আকবরের জন্ম হয়। বাবা দুষ্মন্ত ও মা চিন্ময়ী দম্পতি সিপাহিজালা চিড়িয়াখানায় তিন শাবকের জন্ম দিয়েছিল। তৎকালীন ত্রিপুরার বনমন্ত্রী অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা অমর, আকবর, অ্যান্টনির উপর ওই তিন শাবকের নামকরণ করেন। সেই তিন শাবকের মধ্যে আকবরকে বেঙ্গল সাফারি পার্কের জন্য বেছে নেয় সেন্ট্রাল জু অথরিটি ও রাজ্য জু অথরিটি। বর্তমানে তার বয়স সাত বছর। আবার একই চিড়িয়াখানায় ২০১৮ সালে জন্ম নেয় সীতা। এরপর এই দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। পরবর্তীতে পশু বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের সাফারি পার্কে আনা হয়। কিন্তু তাদের নাম নিয়ে শুরু হয়ে তুমুল বিতর্ক।
এক অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে সার্কিট বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়। এরপরই মামলায় রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়জিৎ চৌধুরী। মামলা শুনানির পর জুলাই মাসে মামলার নিষ্পত্তি হয়। মামলা নিষ্পত্তি হতেই নামকরণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেইমতো মুখ্যমন্ত্রী সিংহ দম্পতির নাম বদলে আকবর ও সীতা থেকে সুরজ ও তনয়া রাখেন। এবিষয়ে রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “আমরা আগেই জানিয়েছিলাম এতে বিতর্কের কিছু ছিল না। কারণ ওই সিংহদের নাম আমাদের রাখাই ছিল না। ওটা ত্রিপুরা সরকারের দেওয়া। আদালতে তা প্রমাণ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সিংহ দম্পতির নামকরণ করেছেন।”
আবার অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়জিৎ চৌধুরী বলেন, “ত্রিপুরা থেকে আনা ওই সিংহ দম্পতির নাম নিয়ে সার্কিট বেঞ্চে যে মামলা ছিল, তার নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযোগ ছিল, যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনদপ্তর নাকি ওই সিংহ দম্পতির নামকরণ করেছে। আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, ত্রিপুরার সরকার ও সংশ্লিষ্ট জু অথরিটি ওই সিংহ দম্পতির নামকরণ করেছিল। তাতে আমাদের কোনও ভূমিকা ছিল না। যে মুহূর্তে এ রাজ্যের সরকারের কাছে বিষয়টি অবগত হয়েছে, তখনই কোনও বিতর্কিত নাম যাতে না-থাকে তার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। সেই মতো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি পাঠানো হয় এবং নামকরণও করা হয়।”